পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীর অভিমুখে।
১৬৫

অনেক খোদিত কারুকার্য্য-হীরা ও মাণিকের ফুল উৎকীর্ণ। নগ্নকায় বালকেরা এই ঔপন্যাসিক রত্নবিভবের উপর তাহাদের নশাল ধরিল; এই মশালে আলো অপেক্ষা ধোয়াই বেশী, যাই হক এই নশালের আলোকে কোথাও কোথাও স্বর্ণালঙ্কারের খুটিনাটিগুলি প্রকাশ পাইতেছে, কোন কোন বহুমূল্য রত্ন হইতে অগ্নিচ্ছটা উচ্ছসিত হইতেছে, কিন্তু মোটের উপর সমস্তই নিবিড় নৈশ অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন। দেয়ালগুলা মাকড়শার জালে বিভূষিতস্থানে স্থানে পাথরের গুড়া জমাট বাঁধিয়া গিয়াছে, স্বেদ ও যক্ষার গড়াইয়া পড়িতেছে; আর বাদুড় চাচিকারা জাগিয়া উঠিয়া, ক্রমাগত ঘোরপাক দিতেছে, কিন্তু তাহাদের ডানার শব্দ শোনা যাইতেছে না। কালো রঙ্গের কাপড় হইতে ছিন্ন একটা বড় টুকরার মত তাহাদের ডানা; সেই ডানার বাতাস উহারা আমাদের গায়ে লাগাইয়া চলিয়া গেল। এবং এক প্রকার তীব্র শব্দ করিয়া উঠিল, ইদুরের কলে ইদুর পড়িলে যেরূপ শব্দ করে কতকটা সেইরূপ।


পণ্ডিচেরীর অভিমুখে।

 মাদুরা ছাড়িয়া, উত্তরে পণ্ডিচেরীর অভিমুখে যতই অগ্রসর হইতে লাগিলাম, তালীবনের আর্দ্র প্রদেশ ততই দূরে সরিয়া যাইতে লাগিল; এখন শুধু স্থানে স্থানে সুচ্ছায় তালকুঞ্জ দেখিতে পাওয়া যায়; তৃণভূমি, বাগান-বাগিচা, ধানের ক্ষেত তালীবনের স্থান অধিকার করিয়াছে। বাতাসও ক্রমে ক্রমে লঘু হইয়া আসিতেছে, মাঠ-ময়দানের মধ্যে জলের বিরলতা, জমি যেন শুকাইয়া গিয়াছে।

 তথাপি, এখানকার লোক-জীবনে গোপ-ভূমি-সুলভ একটা শান্তির ভাব পরিলক্ষিত হয়। আমাদের য়ুরোপের ন্যায় এখানকার বসতি ঘননিবিড় নহে। নগ্নকায় রাখালেরা, লাল শাড়ী-পরিহিতা রাখালিনীয়া