পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ছাগলের পাল, ককুদবান্ ক্ষুদ্রকায় গরুর পাল লইয়া মাঠে চরাইতেছে। মাঠের ঘাস ইহারই মধ্যে হলদে হইয়া গিয়াছে, কিন্তু এখনও যথেষ্ট আছে।

 গ্রামের ঘরগুলা চূণ ও পেটা-মাটী দিয়া গঠিত। প্রত্যেক গ্রামে এক-একটি দেবালয় আছে। দেবালয়ের দেবমূর্তিগুলি পিরামিডের আকারে খাড়া হইয়া উঠিয়াছে, বিকট মূর্তিগুলা দেয়ালের উপর বসিয়া আছে;—সমস্তই প্রখর সূর্যের উত্তাপে ও লাল ধূলার মধ্যে ম্রিয়মাণ। দূর-দূর ব্যবধানে, প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড গাছের কুঞ্জ, তাহারই ছায়াতলে কতকগুলি দেবতা সিংহাসনে সমাসীন; কতকগুলি পাথরের ছাগল ও পাথরের গরু দেবতাদিগকে আগলাইতেছে, এবং বহুশতাব্দী ইতে তাহাদের দিকে মুখ ফিরাইয়া তাহাদের ধ্যানে মগ্ন রহিয়াছে।

 লাল ধূলা! এই ধূলা ক্রমেই কষ্টকর হইয়া উঠিতেছে। শুষ্কতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাইতেছে। মে সেই সকল স্থানে প্রবেশ করিলাম, যেখানে অস্বাভাবিক জলকষ্ট। আকাশের সেই একই ভাব, সেই একই স্বচ্ছতা, সেই একই নীলবর্ণ।

 চাষারা চারিদিকে, সেকেলে পদ্ধতি অনুসারে সুকৌশলে জলসেচন করিতেছে। ধানের ক্ষেতের ধারে ধারে ছোট ছোট জলস্রোত চলিয়াছে, তাহারই এক-হাঁটু জলে দাড়াইয়া, দুই দুইজন লোক একটা রঞ্জুর প্রান্ত ধরিয়া আছে, সেই রজু একটা ভেড়ার চামড়ার মসকে বাঁধা; উহারা ঐ মসকটাকে একপ্রকার যান্ত্রিক গতির দ্বারা তালে তালে দুলাইতেছে ও তাহার সঙ্গে গান করিতেছে; এবং উহাতে জল ভরিয়া, ধানক্ষেতের লাঙ্গল-কৃত খাতের মধ্যে ঢালিয়া দিতেছে।

 গাছের তলায় যে সকল কূপ আছে তাহার প্রণালী স্বতন্ত্র, তাহার গানও স্বতন্ত্র। একটা দীর্ঘ দণ্ডের প্রান্তে একটা চামড়ার মসক আবদ্ধ, সেই দণ্ডটা একটা মাস্তুল-কাঠের মাথার উপর বিলম্বিত; সেই দণ্ডটার উপর, দুজন লোক “জিন্যাষ্টের” সহজ-শোভন চটুলতা সহকারে পদচারণ