পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

এগিয়া আসিতেছে, আবার পিছিয়া যাইতেছে। চোখের দুইটি তারা, মিনা-র সাদা জমির উপর বসানো কৃষ্ণমণির (Onyx) মত কালে দুইটি তারা আমার চোখের উপর নিবদ্ধ। এই যে হৃদয়-দুর্গ অধিকার করিবার জন্য একবার আমাকে আক্রমণ করিতেছে, আবার পলায়ন করিয়া ছায়াকারের মধ্যে মিশিয়া যাইতেছে, একবার এগিয়া আসিতেছে, আবার পিছাইয়া যাইতেছে,–এই সমস্ত ক্ষণ উহার চোখের দুইটা কালো তারা আমার চখের উপর সমানভাবে নিবদ্ধ রহিয়াছে। এই শ্যামল তরুণ মুখখানি মণিরত্নে বিভূষিত; হীরক-খচিত একটা সোণার সিথি ললাট বেষ্টন করিয়া, চুল ঢাকিয়া রগের দিকে নামিয়া আসিয়াছে; কাণে ও নাকে আরও কতকগুলি হীরার টুকরা ঝিক্ মিক্‌ করিতেছে।

 আলোকোজ্জ্বল রাত্রি। জনতার মধ্যে, এই রমণীকে ছাড়া, আমি আর কাহাকেও দেখিতেছি না, উহার ঐ সিথি-বিভূষিত মস্তক ছাড়া আর কিছুই দেখিতেছি না। উহার উজ্জ্বলতা যেন আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। দর্শক-বৃন্দের জনতাও আছে—সম্মুখ দিকে ঠেলিয়া আসিয়া উহারাও রমণীকে একদৃষ্টে দেখিতেছে; এতটা ঠেলিয়া আসিয়াছে যে রমণী অতি কষ্টে ঘোরাফেরা করিতেছে—উহারা রমণীর জন্য কেবল একটি সরু পথের মত স্থান রাখিয়া দিয়াছে; সেই স্থানটুকুর মধ্য দিয়া, নর্তকী একবার আমার নিকট আসিতেছে আবার আমার নিকট হইতে পলায়ন করিতেছে; কিন্তু আমার চক্ষে জনতার যেন অস্তিমাত্র নাই; বস্তুত সেই রমণীকে ছাড়া,—সেই রমণীর শিরোভূষণটি ছাড়া, তাহার সেই চোখের কালো তার ও কালো ভুরুর খেলা ছাড়া, আমি যেন আর কাহাকেও দেখিতে পাইতেছি না—কিছুই দেখিতে পাইতেছি না... বেশ মোটা-সোটা ও মাংসল হইলেও, উহার দেহষ্টি ভুজঙ্গের ন্যায় সুনম; বিধাতা যেন মনোহরণ ও আলিঙ্গনের জন্যই উহার বাহু দুটি গড়িয়াছেন; রমণী, হীরক নাণিক্য-খচিত বলয়-কেউৱাদি ভূষণে আস্কন্ধ-বিভূষিত