পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

রং-চঙে বড় বড় তালপাতার পাখা ব্যজন করিতেছে; যেখানে লোকেরা বেশভূষায় বিভূষিত—এমন কি পুরুষেরা পর্য্যন্ত কাণে হীরা পরিয়াছেকোমরবন্দে হীরা পরিয়াছে—সেই জনতার মধ্যে ভৃত্যদের এইরূপ নগ্নতা: কেমন বিসদৃশ বলিয়া মনে হয়।

 নর্তকীকে উহারা বলিয়াছে,আমারই জন্য এই উৎসবের আয়োজন; তাই, চতুর অভিনেত্রী এবং বংশপরম্পরাক্রমে পেদার এই নর্তকী, আমার উপরেই তাহার সমস্ত চাতুরী প্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিয়াছে।

 আজিকার রাত্রির জন্য, উহাকে বহুদূর হইতে আনা হইয়াছে—এই প্রসিদ্ধ নর্তকী, দক্ষিণ প্রদেশের কোন এক বৃহৎ দেবালয়ে মহাদেবের সেবায় নিযুক্ত। উহাকে আনিতে অনেক আর্থব্যয় হইয়াছে।

 নর্তকী সন্মুখ দিকে ঝুকিতেছে কিংবা ধনুকের মত বাকিয়া পড়িতেছে, হাতের আঙ্গুল বাকাইয়া, পায়ের আঙ্গুল ঘুরাইয়া কত রকম ভঙ্গী করিতেছে। শৈশবাবধি অভ্যাসের দ্বারা উহার পায়ের আঙ্গুলগুলা বেশ সুনম হইয়াছে; পায়ের বুড়া আঙ্গুলটা সর্ব্বদাই অন্য আঙ্গুল হইতে বিচ্ছিন্ন এবং সিধা ভাবে উপরপানে তোলা। সোনালী গাজের শাড়ীতে নিতম্বদেশ অচ্ছািদিত এবং বক্ষদেশ আঁটসাট কঁচুলীতে আবদ্ধ—তাহাতে শ্যামল গাত্র ও মাংশপেশীযুক্ত মাংসল শরীরের একটু আভাস পাওয়া যাইতেছে, বক্ষের নিম্ন অংশের নড়াচড়া দেখা যাইতেছে।

 উহার নৃত্যে কেবলই কতকগুলি অঙ্গভঙ্গ ও হাব-ভাব; যে নাট্যাভিনয়ে কথোপথন নাই,—কেবল একজন মাত্র অভিনয় করে, সেইরূপ নাট্যের যেন ইহা মূক অভিনয়; আর আমার চোখের উপর চোখ নিবন্ধ করিয়া, সেই জনতা-বিরচিত সরু পথের মধ্য দিয়া, একবার আমার নিকটে এগিয়া আসিতেছে, আবার সহসা আলোকিত নৃত্যশালার শেষ প্রান্তে পিছিয়া যাইতেছে।

 এইবার নর্তকী, মনোহরণ ও ভৎসনার একটা দৃশ্য অভিনয় করি।