পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীতে।
১৭৩

তেছে। ঐ ওদিকে উহার পশ্চাতে কতকগুলি বাদক গান গাহিয়া এই দৃশ্যটির ভাব ব্যক্ত করিতেছে এবং গানের সঙ্গে বাঁয়া-তবলা ও বাঁশী বাজাইতেছে। নর্তকীও মূক-অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃদুস্বরে যেন স্বগত গাইতেছে; সে গান আর কাহাকে শুনানো যেন তাহার উদ্দেশ্য নয়— কেবল অভিনয়ের অংশগুল পর-পর যাহাতে তাহার স্মরণে আইসে এইজন্যই যেন আপনার মনে গাইতেছে।

 এই নর্তকী নৃত্যশালার একপ্রান্তে কিছুক্ষণ অন্ধকারের মধ্যে ছিল, সহসা আবার আসিয়া উপস্থিত;—উহার দেহ আপাদ-মস্তক সোনা ও জহরতে আচ্ছন্ন, উহার চোখৃ দিয়া যেন আগুন ছুটিতেছে; কুপিতা নায়িকার ন্যায় বোষকষায়িত-নেত্র হইতে আমার উপর তীক্ষ্ণ বাণ বর্ষণ করিতেছে; আমি যেন উহার নিকট কি একটা অপরাধ করিয়াছি—তাহারই জন্য যেন সে স্বর্গ মর্তকে সাক্ষী রাখিয়া, আমাকে ভৎসনা করিতেছে••

 তার পর, নর্তকী হঠাৎ উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল, সে হাসি পরিহাসের হাসি, ঘৃণার হাসি; জনতার নিকট আমাকে হাস্যাস্পদ করিবার জন্য আমার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া হাসিতে লাগিল। জানা কথা, উহার ভৎসনাও যেমন কৃত্রিম, এই উপহাসও সেইরূপ কৃত্রিম। কৃত্রিম হউক, কিন্তু আসলের ঠিক্ নকল;—চমৎকার নকল।

 নর্তকী, কণ্ঠ একটু উত্তোলন করিয়া, একটু গম্ভীর স্বরে, তীব্র হাসি হাসিতেছে। তাহার হাসি মুখ দিয়া, ভুরু দিয়া, উদর দিয়া, কম্পন বক্ষ দিয়া, যেন কাটিয়া বাহির হইতেছে। হাসির আবেশে উহার সর্ব্বাঙ্গ কঁপিতেছে এবং এইরূপ হাসিতে হাসিতে সে দূরে সরিয়া যাইতেছে। সে হাসি দুর্দমনীয়, সে হাসি শুনিলে অন্যকেও হাসিতে হয়।

 আর যেন আমার মুখদর্শন করিবে না, এইভাবে অত্যন্ত অবজ্ঞা সহকারে, মুখ ফিরাইয়া, নর্তকী দ্রুতপদক্ষেপে পিছাইতে পিছাইতে চলিয়া গেল। আবার ফিরিয়া আসিল—কিন্তু এবার ধীরপদক্ষেপে ও গম্ভীর