পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

বৃক্ষে পরিণত হইয়াছে; এবং বটবৃক্ষের নিয়মানুসারে তাহার শাখা প্রশাখা হইতে অসংখ্য শিকড় নামিয়াছে। এই বৃক্ষের চতুষ্পার্শে পূরাতন বেদিকাসমূহ স্থাপিত; তাহার উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পূজাপ্রদীপ দিবা-রাত্রি জ্বলিতেছে, এবং নানাবিধ সুগন্ধি কুসুম বিকীর্ণ রহিয়াছে। প্রতিদিনই এইখানে টাটকা ফুল ছড়াইয়া দেওয়া হয়। যখন দেখি, এই অরণ্যের মধ্যে, প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড দ্বারপথগুলি সাদা মার্ব্বেল পাথরে নির্মিত ও ভাস্করের সূক্ষ্ম-কারুকার্যে আচ্ছন্ন; যখন দেখি, স্বাগত-স্মিতমুখে দেবতারা কত কত সোপান-ধাপের উপর দাঁড়াইয়া আছেন; যখন দেখি, এই দ্বারপথগুলি দিয়া কোথাও উপনীত হওয়া, যায় না, তখন মনোমধ্যে একটা অভূতপূর্ব্ব বিষাদের ভাব উপস্থিত হয়।

 গৃহগুলি সম্ভবতঃ কাঠের ছিল। কিন্তু এত শতাব্দীর পর, তাহাদের কোন চিহূমাত্রও নাই। কেবল সোপানের পাপ ও দ্বারদেশগুলি রহিয়া গিয়াছে। এক্ষণে এই বিলাসময় সুসমৃদ্ধ দ্বারপথগুলি বরাবর প্রসারিত হইয়া গাছের শিকড়,লতা-গুল্ম ও মৃত্তিকায় গিয়া শেষ হইয়াছে।

 কিয়ৎ বৎসর হইতে, অনুরাধপুরের এক কোণে, একটি ক্ষুদ্র গ্রাম বসিয়াছে। সেখানে কতকগুলি লোক বাস করে। গ্রামটি তেমন বর্ধিষ্ণু নয়—উহা একটি গোপ-পল্লী মাত্র। ভগ্নাবশেষ নগরটির ন্যায় এই গ্রামটিও তরুশাখায় আচ্ছন্ন। সুতরাং এখানেও সেই বিষাদের রাজত্ব। সে সকল ভারতবাসী এই ধ্বংস-নগরে আসিয়া আবার বাস করিতেছে, তাহারা অরণ্যের বৃহৎ বৃক্ষগুলিকে ছেদন করে নাই; পরন্তু, আগাছা ও কণ্টক গুল্ম প্রভৃতি কাটিয়া সাফ করিয়া, দিব্য শাদ্বলভূমি বাহির করিয়াছে। সেখানে এখন তাহাদের গো মহিষ ছাগল প্রভৃতি পালিত পশুগণ ছায়াতলে সুখস্বচ্ছন্দে চরিয়া বেড়ায়। মন্দিরসংলগ্ন ভূমিতে বিচরণ করে বলিয়া সেখানকার লোকেরা ইহাদিগকে পরম পবিত্র বলিয়া মনে করে।

 যে সকল ভারতবাসী এই পবিত্র ভগ্নাবশেষের মধ্যে জীবনযাপন করে,