পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদের অভিমুখে।
১৭৯

রহিয়াছে তাহাদের শান্তিময় ভাব-পূৰ্বকালের উপনিবেশ-জীবনের একটা দৃশ্য মনে করিয়া দেয়। তখনকার ‘কালে, এরূপ উন্মত্ত ব্যস্তভাব ছিল না, কার্যের কঠোরতা ছিল না, দ্রুতগতি বাষ্পপোত ছিল না; তখন খামখেয়ালী পালের জাহাজ, আফ্রিকা ঘুরিয়া কত বিলম্বে এখানে আসিত•••

 যাইবার সময় আমার যে কষ্ট হইয়াছিল তাহা অবশ্য গভীর নহে; কালই আমি সমস্ত কষ্ট ভুলিয়া যাইব, আমার সম্মুখে আবার কতকগুলা নূতন দৃশ্য আবিভূত হইয়া এই কষ্টের ভাবকে মন হইতে বিদূরিত করিবে। কিন্তু, পুরাতন ফ্রান্সের যে ক্ষুদ্র একটি কোণ, পথ হারাইয়া বঙ্গোপসাগরের তীরে আসিয়া পড়িয়াছে, উহা যেমন আমার মনকে আটকাইয়াছে—এই পরমাশ্চর্য ভারতে যাহা কিছু এ পর্য্যন্ত আমি দেখিয়াছি, কিংবা পরে আরও যাহা দেখিব, তাহার কিছুই এরূপ করিয়া আমাকে আটকাইতে পারে নাই কিংবা পারিবে না।


হৈদরাবাদের অভিমুখে।

 আর সে তৃণশ্যামলা ভূমি নাই; আর সে তালজাতীয় বৃক্ষাদি নাই; আর সে লাল মাটি দেখা যায় না। বেশ একটু শীত পড়িয়াছে।... পণ্ডিচেরী ও মাদ্রাজের হরিৎশ্যামল প্রদেশ ছাড়িয়া আসিবার পর,—সমস্তরাত্রি ভ্রমণ করিয়া আজ যখন প্রথম জাগ্রত হইলাম, তখন এই সমস্ত পরিবর্তন লক্ষিত হইল। সেই “চিরকেলে” কাকদিগের: কা-কা-ধ্বনি ছাড়া আর সমস্তই পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। হাজাপোড়া মাটি, ধূসরবর্ণের মাঠ, জোয়ারিশস্যের ক্ষেত, পর্যায়ক্রমে দৃষ্টিগোচর হইতেছে। নারিকেলের পরিবর্তে শুধু কতকগুলা বিরল মুসব্বরতরু, শীর্ণকায় তাপশুষ্ক খর্জ রবৃক্ষগ্রামপল্লির চতুর্দিকে লক্ষিত হইতেছে। মনে হয়, এখানকার গ্রামগুলিও