পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

যেন একটা কৃত্রিম আর্‌বী-ভাব ধারণ করিয়াছে। অগ্নিস্ফূলিঙ্গবর্ষী মরুভূমির সহিত,বিষাদময় প্রদেশসমূহের সহিত যে ইস্‌লামজাতির চিরসম্বন্ধ, সেই ইস্‌লামজাতি এখানে আসিয়া যেন তাহাদের জাতীয়ভাবটি মুদ্রিত করিয়া দিয়াছে।

 পরিচ্ছদেরও পরিবর্ত্তন। লোকদিগের গাত্র আর নগ্ন দেখা যায় না, পরন্তু শুভ্র পরিচ্ছদে সর্ব্বাঙ্গ আবৃত। আর সে দীর্ঘলম্বিত কেশগুচ্ছ দেখা যায় না, পরন্তু মস্তক উষ্ণীষের দ্বারা আচ্ছাদিত।

 মাঠময়দানের উপর দিয়া যতই অগ্রসর হওয়া যায়, ততই দেখা যায়, ঘণ্টায়-ঘণ্টায় যেন শুষ্কতার বৃদ্ধি হইতেছে। যে-সব ধান্যক্ষেত্রের উপর হলকর্ষণের রেখাচিহ্ন বিদ্যমান, সেই ক্ষেতগুলি যেন আগুনে জ্বলিয়া-পুড়িয়া গিয়াছে। জোয়ারি-ক্ষেতগুলি অপেক্ষাকৃত তাপসহ হইলেও, তাহার অধিকাংশই “হলদে-মারিয়া” গিয়াছে। যে-সব ক্ষেত এখনো টিকিয়া আছে, সেই সব ক্ষেতের স্বল্পাবশিষ্ট শস্য পাছে পাখী ও ইদুরে খাইয়া ফেলে, সেইজন্য কৃষকেরা মাচার উপর বসিয়া পাহারা দিতেছে। হায় হায়! বেচারা মানুষ, দুর্ভিক্ষপীড়িত হইয়া, ক্ষুধাক্লিষ্ট দুঃসাহসী পশুর গ্রাস হইতে দুইচারিমুঠা শস্য বাঁচাইবার জন্য প্রাণপণে যুঝাবুঝি করিতেছে।

 শীতরাত্রির অবসানে সূর্য্যদেব চুল্লিসুলভ প্রখর তাপ ভূমির উপর নির্দ্দয়ভাবে ঢালিয়া দিলেন। আকাশ স্বচ্ছ নীলবর্ণ ধারণ করিয়া একটা বিশাল নীলকান্তমণির ন্যায় প্রতীয়মান হইতে লাগিল।

 দিবাবসানে, এখানকার ভূভাগ, এক অপূর্ব্বভাব ধারণ করিল। অফুরন্ত তাপদগ্ধ জোয়ারি-ক্ষেতের উপরে, তাপদগ্ধ জঙ্গলের মধ্যে, প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড শ্যামল পাষাণস্তূপ;—বিচিত্র আকারের, মসৃণগাত্র, অসংলগ্ন বড়-বড় গণ্ডশৈল। মনে হয়—যতপ্রকার অদ্ভুত ভঙ্গীতে,—অদৃঢ়ভাবে কোন-এক পদার্থকে বসান যাইতে পারে, সেইরূপ উহাদিগকে বসানো হইয়াছে। কোনোটা একেবারে খাড়া হইয়া আছে; কোনোটা ঝুকিয়া