পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

শিয়োদেশে, এই কথাগুলি বড়-বড় সোনালি অক্ষরে লিখিত রহিয়াছে - “আমাদের নিজামবাহাদুর দীর্ঘজীবী হউন।”

 শুভ্রবর্ণ হৈদরাবাদ। একটি শুষ প্রায় নদী সম্মুখ দিয়া বহিয়া যাইতেছে। হাতীরা দলে-দলে নদীতে নাবিয়া উহার শীতল জলে অবগাহন করিতেছে। এখনো কেন নিজাম স্বরাজ্যে প্রত্যাগমন করিতেছেন না— তাই, উৎসবমত্ত হৈদরাবাদ,—ধ্বজপতাকাভূষিত হৈদরাবাদ, একসপ্তাহ ধরিয়া প্রতিদিন তাহার প্রতীক্ষা করিতেছে।

 যে বিশাল প্রস্তরসেতু দিয়া নগরে প্রবেশ করিতে হয়, সেই সেতুর মুখে স্বর্ণপত্রপচিত লাল ক্রেপ"-বস্ত্রে মণ্ডিত একটি দ্বারপ্রকোষ্ঠ প্রসারিত; —তাহারি ঝালরে লেখা রহিয়াছে;—"স্বাগত নিজামবাহাদুর!"

 এই সেতুর উপর দিয়া কত বর্ণের কত লোক পদব্রজে, কত লোক যানে, কত লোক বাহনে চলিয়াছে;—কতপ্রকার যান, কতপ্রকার বাহন, কতই সমারোহ, তাহার আর ইয়ত্তা নাই! বিষাদময় বিজনতার মধ্য দিয়া যখন আমি এখানে আসিয়া পৌছিলাম, তখন প্রত্যাশা করি নাই, যে-নগর ক্ষেত্রভূমির মধ্যে,—প্রস্তরময় ধূসর মাঠময়দানের মধ্যে বিলীন, সেই নগরটিকে এমন জীবন-উদ্যমে পূর্ণ দেখিব, এমন উজ্জ্বল বর্ণে রঞ্জিত দেখিব, এমন উৎসবানন্দে মত্ত দেখিব।

 শাদা-শাদা, সোজা-সোজা, বড়-বড় রাস্তা—লোকের জনতায় সমাচ্ছন্ন। ফুলের রঙের আভায় যেরূপ নানা প্রকাব সূক্ষ্ম ভেদ লক্ষিত হয়, এই সব লোকদিগের মুখবর্ণেও সেইরূপ সূক্ষ্ম ভেদ বিদ্যমান। নেত্র ঝলসিয়া যায় প্রথমেই উষ্ণীষের অনন্ত বৈচিত্র্য ও বিলাসলীলা দেখিয়া; পাগড়ির গোলাপি রং—"সাম"-মাছের রং—পিচ-ফুলের রং। কোনোটায় কুমুদফুলের, কোনোটায় “অ্যামারাস্ত"-ফুলের, কোনোটায় “নাসি” ফুলের, কোনোটায় “বটবৃকপ"-ফুলের রং। পাগড়িগুলা প্রকাণ্ড-বড় -ছোট-ছোট একপ্রকার চুচাল-মুখ টুপির চারিধারে জড়াইয়া বাধা;