পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
১৫

এই সকল ভগ্ন প্রাসাদসংলগ্ন পুষ্করিণীতে স্নান করে, তাহাদের বিশ্বাস, রাজা ও রাজকুমারদের“ভূত” সন্ধ্যার সময় এখানকার চারি দিকে ঘুরিয়া বেড়ায়; এই জন্য তাহারা জ্যোৎস্না রাতে বড়-বড় দাগোবার ছায়াতলে কিছুতেই দাঁড়াইতে চাহে না। তা ছাড়া, এই সুচ্ছায় স্থানঠিকে তপস্যা ও ধ্যান ধারণার অনুকূল, পবিত্র আশ্রম বলিয়া উপলব্ধি হয়। দেবালয়-সুলভ একটি শান্তির ছায়া এই সকল পথের উপর, এই সকল গালিচা-বৎ তৃণভূমির উপর বিরাজমান। একজাতীয় বড়-বড় ফুল ইহার উপর বৃষ্টিবিন্দুর ন্যায় ঝরিয়া-ঝরিয়া পড়িতেছে।

 দুই সহস্র বৎসর পূর্বেকার ভগ্ন পাষাণমূর্তিদিগের সম্মুখে, অরণ্যের মধ্যে, ছোট-ছোট প্রদীপ অষ্ট প্রহর অলিতেছে; বহু পুরাতন পাষাণের উপর টাটকা ফুল প্রতিদিন নিত্য-নিয়মিত স্থাপিত হইতেছে—এই দৃশ্যটি কি মর্মস্পর্শী!

 ভারতবর্ষে, দেবতাদিগকে ফুলের তোড়া উৎসর্গ করা হয় না; পরন্তু যুথী জাতি মল্লিকা মালতী প্রভৃতি শুভ্রবর্ণ ও সুগন্ধি পুষ্পরাশি পূজা-বেদিকার উপর অজস্র বিকীর্ণ হইয়া থাকে, —তাহার উপর দুইচারিটি বঙ্গদেশীয় গোলাপ ও রক্তজবাও ছড়াইয়া দেওয়া হয়।

 এই পূজোপহার ভগ্ন চূর্ণ মন্দিরের প্রস্তর-ফলকের উপর স্থাপিত হয়— প্রস্তরফলকগুলি ধীরে-ধীরে মৃত্তিকা-গর্ভে ক্রমশঃ বিলীন হইয়া যাইতেছে।