পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

গল্কণ্ডা।

  হৈদরাবাদের কোন-এক উপনগর যেখানে শেষ হইয়াছে—সেই বাঁকের, মুখে একটা পুরাতন প্রাচীরের গায়ে এই কথাগুলি উৎকীর্ণ রহিয়াছে। “গণ্ডার পথ"। ভগ্নাবশেষের পথ, নিস্তব্ধতার পথ;—এরূপ লিখিলেও ক্ষতি ছিল না।

 ঘোড়াদের দুকি-চালে পথে খুব ধূলা উড়িয়াছে। এই বিজন পথের ধারে-ধারে প্রথমেই দেখা যায় কতকগুলি ক্ষুদ্র পোড়ো” মজিদ, আর কতকগুলি সরু-সৰু ক্ষুদ্র ধ্বজমন্দির—যাহা একটু ভগ্নদশাপন্ন হইলেও অতীব শোভন ও সুষমাবিশিষ্ট। তাহার পব আর কিছুই নাই; কেবল পাংশুবর্ণ তাপদগ্ধ বিস্তীর্ণ ময়দান, আর কতকগুলা পাষাণস্তপ ছোট-ছোট পাহাড়ের আকারে, ঢিবির আকারে, “পিরামিডের” আকারে, ইতস্তত বিকীর্ণ এবং দেখিতে এরূপ অদ্ভুত যে, উহাদিগকে এই পৃথিবীর কোন পদার্থ বলিয়া মনেই হয় না।

 গাড়িতে একঘণ্টার পথ অতিক্রম করিয়া, একটা জনশূন্য আ-তল-শুষ্ক হ্রদের ধারে আসিয়া পড়িলাম। ইহারই পশ্চাদ্ভাগে প্রাচীরবদ্ধ একটা বৃহৎ মৃতনগরের দিগন্তব্যাপী উপচ্ছায়া। অত্রত্য ময়দানভূমির ন্যায় ইহাও ভীষণ ধূসরবর্ণ। ইহাই সেই গল্কা, যাহা তিন শতাব্দী ধরিয়া এসিয়ার একটি পরমাশ্চর্য দ্রষ্টব্য-পদার্থ বলিয়া প্রখ্যাত ছিল। কে না জানে, ভগ্নাবশেষের অবস্থাতেই—নগর প্রাসাদাদি মানুষের সমস্ত কীর্তিমন্দির গুলিই আসল অপেক্ষা অনেক বড় বলিয়া মনে হয়। কিন্তু এই যে মৃতনগরের উপচ্ছায়াটি দেখা যাইতেছে, ইহা বাস্তবিকই একটা প্রকাণ্ড ব্যাপার। ইহার দস্তুর প্রথম-প্রাকারটি অনুন ৩০ফী উচ্চ। বুরুজ, অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য রন্ধময় স্থান, প্রস্তরময় আবৃত প্রহরিস্থানসমস্তই উহাতে বিদ্যমান; এবং উহা আঁকিয়া-বাঁকিয়া চলিতে-চলিতে