পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ভাজওয়ালা জোড়া-কপাটগুলি দেওয়ালের গায়ে সংলগ্ন, ধাতুপত্রে মণ্ডিত এবং লম্বা-লম্বা ছোরার মত তীক্ষ্ণধার লৌহকণ্টকে সমাকীর্ণ। পূর্ব্বকালে। হস্তিগণ আত্মবিনোদনার্থ নগরের মধ্যে দলে-দলে প্রবেশপূর্ব্বক দন্তের দ্বারা অনেক কাঠের কাজ নষ্ট করিয়া বিস্তর ক্ষতি করিত। উহাদিগকে অপসারিত করিবার জন্যই দ্বারের কপাটগুলি এইরূপ ভীষণ বর্ম্মে আবৃত। আমার ক্ষুদ্র যানবাহন যখন এই নগরের মধ্যে প্রবেশ করিল (যদিও কোচম্যানের মাথায় জরির পাগড়ি ছিল এবং সহিস একটা লম্বা চামর মইয়া ঘোড়ার গাত্র হইতে মাছি তাড়াইতেছিল), তখনই আমাদের য়ুরোপীয় ক্ষুদ্র ও দীনহীনতা সহসা প্রকাশ হইয়া পড়িল!•••

 এই-সব স্থূলকায় প্রাচীর হইতে বাহির হইয়া প্রথমেই যে রাস্তায় আসিয়া পড়িলাম, সেই রাস্তাটিতেই যা-কিছু লোকের বসতি। কতকগুলি নিঃস্ব লোক প্রাসাদের ভগ্নাবশেষের মধ্যে বাসা করিয়া আছে এবং সেইখানে উহারা দুর্গরক্ষী সৈনিকদিগের ব্যবহারার্থ দুইচারিখানি সামান্য দোকান খুলিয়াছে।

 তা ছাড়া, এই বিশাল ঘেরের মধ্যে আর সমস্তই শূন্য ও নিস্তব্ধ। গল্ক ণ্ডা এখন শুধু ভস্মাচ্ছন্ন একটা শ্মশানক্ষেত্র,—স্বস্থানচ্যুত গণ্ডশৈলে সমাকীর্ণ। প্রকাণ্ডকায় সুপ্ত পশুর পৃষ্ঠদেশের ন্যায় সেই সব পাষাণস্তুপ —যাহা মানবগঠিত পদার্থ অপেক্ষা অধিকতর ঘাতপ্রতিরোধী—ইতস্তত উথিত হইয়াছে; সেই সব গোলাকার মসৃণ গণ্ডশেল,—যাহা সমস্ত দেশময় পরিব্যাপ্ত - -পর্বতের ন্যায় ইতস্তত মাথা তুলিয়া আছে।[১]

  1. নিজামরাজ্যের এই সব গঙশৈলসম্বন্ধে একটা পৌরাণিকী কথা প্রচলিত আছে। পৃথিবীর সৃষ্টি শেষ হইয়া গেলে ঈশ্বর যখন দেখিলেন, কতকগুলা অতিরিক্ত উপকরণ উদ্বৃত্ত হইছে, তখন তিনি এই সমস্ত লইয়া, হাতে গোলা পাকাইয়া, সেই সব গোলোকপিণ্ড পৃথিবীর উপ-এই প্রদেশে-ইতস্তত নিক্ষেপ করিলেন।