পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৯১

 এই দুর্গনগরের দ্বারগুলিও নিম্নস্থ প্রাকারদ্বারের ন্যায় ভীমদর্শন ও লৌহকণ্টকে আচ্ছাদিত। দুর্গাদি অতিক্রম করিয়া, গণ্ডশৈলসমূহ অতিক্রম করিয়া, কখন খোলা-পথে,কখন বা অন্ধকার-সিড়ি দিয়া উপরে উঠিতে হয়। সমস্তই এরূপ বিশাল যে, দেখিয়া হতবুদ্ধি হইতে হয়। যে ভারতে প্রকাণ্ড পদার্থ দেখিয়া আর বিস্ময় উৎপন্ন হয় না, সেই ভারতের পক্ষেও এ সমস্ত প্রকাণ্ড বলিয়া মনে হয়। দন্তুর প্রাকারাবলী, নৈসর্গিক গণ্ডশৈলসমূহ পর্যায়ক্রমে উপযুপরি উথিত হইয়া সমস্ত স্থানটিকে দুর্গম করিয়া তুলিয়াছে। অবরোধের সময়ে, জলরক্ষণের জন্য কতকগুলি গভীর-নিখাত চৌবাচ্ছা রহিয়াছে। এই গভীর গহ্বরগুলি শৈলগাত্র খনন করিয়া নির্ম্মিত। তা ছাড়া, কতকগুলা কালো-কালো গর্ত্ত রহিয়াছে—যাহা সুরঙ্গপথের মুখ। এই সুরঙ্গটি পর্ব্বতের হৃদয় ভেদ করিয়া চলিয়া গিয়াছে। যখন শত্রুর আক্রমণে হতাশ হইয়া পলায়ন ভিন্ন আর কোন উপায় থাকে না, তখন এই সুরঙ্গটিই পলায়নের প্রকৃষ্ট পথ। শেষদিন পর্য্যন্ত যাহাতে ভজনার ব্যাঘাত না হয়, এইজন্য উচ্চ হইতে উচ্চতর প্রত্যেক শিখরে একএকটি মজিদ রহিয়াছে। যাহাতে দীর্ঘকাল পর্য্যন্ত অসংখ্য শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করা যাইতে পারে, এই উদ্দেশ্যে কল্পনাচক্ষে বাস্তববৎ প্রত্যক্ষ করিয়াই যেন সমস্ত আয়োজন পূর্ব্ব হইতে সজ্জিত।

 আধুনিক কামানসৃষ্টির তিন শতাব্দী পূৰ্বে গণ্ডাব প্রবলপবাক্রান্ত সুলতানগণ এই দুর্গ হইতে কিরূপে দূরীকৃত হইয়াছিলেন, তাহা বুঝা কঠিন।

 যতই উচ্চে উঠা যায়, ততই মাথার উপর সূর্যের প্রখর উত্তাপ,—ততই যেন চতুর্দিস্থ মরুদৃশ্যের বিষাদময় মণ্ডলপরিধিটি বিস্তৃত হইতে থাকে। শিখরস্থ ইমারৎগুলি উচ্চতা অনুসারে একদিকে যেমন অধিকতর ভীমদর্শন, তেমনি আবার ভগ্নদশাপন্ন। উহারা এতটা ঝুঁকিয়া আছে যে, দেখিলে