পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৯৭

পূর্ব্ব্বদিকে উচ্চ শৈলভূমি দিগন্ত পর্য্যন্ত প্রসারিত। আঁকা-বাঁকা পথ দিয়া উপরে উঠিতে হইল। আমাদের মন্থরগামী শকটের পিছনে-পিছনে আমরা পদব্রজে চলিতে লাগিলাম। এখন সূর্যাস্তের সময়। মেঘের অভাবে দেশ মৃতকল্প,তথাপি সূর্যাস্তের সেই একই অপরিবর্তনীয় আরক্তিম ভাস্বর-মহিমা। আমরাও যেমন উপরে উঠিলাম, আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই দৌলতাবাদ—ধ্বজচূড়া-প্রাকার-মন্দির-সমন্বিত সেই ভীষণ দৌলতাবাদ যেন মস্তক উত্তোলন করিয়া খাড়া হইয়া উঠিল; মুক্ত আকাশে, দেবকিরীটের ন্যায় অশুভানুর কিরণচ্ছটার মধ্যে, দৌলতাবাদের অবয়বরেখা ফুটিয়া উঠিল। এদিকে সেই নিস্তব্ধ অসীম লোহিত ক্ষেত্রভূমিতে যেন আগুন জ্বলিতেছে বলিয়া বোধ হইল, সেখানে জীবনের নিদর্শনমাত্র নাই।

 এই উচ্চ শৈলভূমির উপর আরো একটা ধ্বংসাবশেষ আমাদের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল;—"রজাস"নামক একটা অত্যন্ত-মুসলমানীধরণের নগর;—"পোড়ো” মসজিদ ও সরু-সরু ভঙ্গুর ধ্বজস্তম্ভে আচ্ছন্ন। উহার প্রাকারাবলীর সন্নিকটে রাশিরাশি সমাধি-গম্বুজ সন্ধ্যার আলোকে আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হইল। রাত্রি যখন আসন্ন, সেই সময়ে এই সব প্রাণশূন্য রাজপথের ধারে ধারে উষ্ণীষধারী কতকগুলি লোক পাথরের উপর উপবিষ্ট রহিয়াছে দেখিলাম। এই দৃঢ়ব্রত বৃদ্ধগণ এই নগরের শেষ-অধিবাসী; শুধু এই সব মজিদের মাহাত্ম্যের খাতিরেই উহারা এখানে “মাটী কামড়াইয়া পড়িয়া আছে।

 তাহার পর প্রায় একঘণ্টাকাল আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হইল নাকেবল সেই একঘেয়ে শ্যামল শৈলরাশি—সায়াহ্নের মহানিস্তব্ধতার মধ্যে সম্মুখে প্রসারিত।••

 পরে হঠাৎ এমন-একটা আশ্চর্য্য পদার্থ—অসম্ভব পদার্থ আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হইল—যাহা দেখিয়া এবং আর কিছুই বুঝিতে না পাইয়া,