পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

প্রথম মুহূর্তে মনোমধ্যে যেন একটু ভয়ের উদয় হয়। সমুদ্র! সমুদ্র আমার সম্মুখে উপস্থিত, অথচ আমি মধ্যভারতে নিজামের রাজ্যে রহিয়াছি। অধিত্যকাভূমির উপর একটা কুঠারখনিত বৃহৎ গহর—সেইখানেই যেন সমস্ত সেই “তরঙ্গিত অসীম” পূর্ণমহিমায় প্রসারিত। বিস্তীর্ণ শৈলভূমির উপর হইতে নিম্নস্থ অধিত্যকাভূমি আমাদের নয়নগোচর হইতেছে। এই উচ্চ শৈলভূমির ধার দিয়া আমাদের যাত্রাপথ। এই সময়ে নিম্নদেশ হইতে একটা প্রবল বাতাস উঠিয়া আমাদের নিকটে আসিয়া পৌছিল; এ বাতাসটা তেমন গরম নহে—যেন কতকটা খোলা-সমুদ্রের হাওয়া...

 এই শৈলভূমির পরপারে হাজাপোড়া গুড়া-মাটীর যে শুক্ষেত্র প্রসারিত—সেইখানেই এই বাতাস ধূলা-বালির ঢেউ উঠাইয়া সমুদ্রের মত সফেন তরঙ্গভঙ্গের সৃষ্টি করিয়াছে।

 তা ছাড়া, আমরা আমাদের যাত্রাপথের শেষসীমায় সবেমাত্র আসিয়া পেীছিয়াছি, এখনো গুহার[১] লেশমাত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় নাই। এই গুহাগুলা আমাদের নিম্নে—ঐ বিষাদময় কল্পিত-সমুদ্রতটের ধারে-ধারে —বিস্তীর্ণ শৈলভূমি কাটিয়া প্রস্তুত হইয়াছে; এবং ঐ জলহীন সমুদ্রের সম্মুখেই এই ভীষণ গুহাগুলা মুখব্যাদান করিয়া আছে।

 এখন রাত্রি, আকাশে তারা জ্বলিতেছে; আমার শকট একটা ক্ষুদ্র পান্থশালার সম্মুখে আসিয়া থামিল। আমার আতিথ্যকারী–পলিকেশ দুইজন বৃদ্ধ ভারতবাসী আমার অভ্যর্থনার জন্য তাড়াতাড়ি আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং তাঁহাদের ভৃত্যগণ—যাহারা অলসভাবে নিকটস্থ মাঠে বেড়াইতেছিল—তাহাদিগকে উচ্চৈস্বরে ডাক দিলেন।

 আজ রাত্রে আমাকে শিবের গুহায় লইয়া যাইতে কেহই সম্মত হইল। তাহারা বলিল, আজ রাত্রিটা অপেক্ষা করিয়া কাল দিনে গেলেই ভাল হয়। অবশেষে একজন ছাগপালক রাখাল কিছু অর্থের লোভে

  1. এলোরা গুহা।