পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৯৯

আমাকে লইয়া যাইতে স্বীকৃত হইল। আমরা সঙ্গে একটা হাত-ল্যাষ্ঠান লইয়া যাত্রা করিলাম। নীচে অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রবেশপথে যাইবার সময় ল্যাঠাল্টা জ্বালাইতে হইবে।

 আজিকার রাত্রি চন্দ্রহীন, কিন্তু বেশ স্বচ্ছ পরিষ্কার; চক্ষু অন্ধকারে একটু অভ্যস্ত হইলেই, এই রাত্রিকালেও বেশ দেখা যাইবে। এখন সেই সাগরচ্ছদ্মবেশী নিঃক্ষেত্রে অবতরণ করিতে হইবে। প্রায় ৬৭ শত-গজপরিমাণ একটা সিড়ি দিয়া নীচে নামিলাম। চারিদিক নিস্তব্ধ, আকাশে তারা ঝিকমিক করিতেছে। কুঠারাহত খোদিত শৈলগণ যেন মর্মান্তিক যাতনায় অভিভূত। এখানকার সকল পদার্থেরই ন্যায় –"ক্যাটা"গাছগুলাও শুষ্কীর্ণ, কিন্তু তবু এখনো খাড়া হইয়া আছে। ইহার শুষ্ককঠিন শাখাগুলা ডালওয়ালা ঝাড়ের বড়-বড় মোমবাতির মত দেখিতে হইয়াছে।

 যাহা উপর হইতে সমুদ্রতট বলিয়া মনে হইয়াছিল, সেই তটরেখা অনুসরণ করিয়া যখন চলিতে আরম্ভ করিলাম, তখন সেই নীচে, অন্ধকার যেন আরো ঘনাইয়া আসিল। উচ্চ শৈলভূমির আড়ালে যেখানে ছায়া পড়িয়াছে, সেই শৈলভূমির পাদদেশে এই কল্পিত সমুদ্রটি অবস্থিত। রাত্রির প্রারম্ভে যে-একটা জোর-বাতাস উঠিয়াছিল, তাহা এখন শান্ত হইয়াছে। এখন কোথাও আর সাড়াশব্দ নাই। এই স্থানটির কি অপূৰ্ব গাম্ভীর্য!

 পর্বতের পার্শ্বদেশে গুহার প্রবেশপথগুলা মুখব্যাদান করিয়া রহিয়াছে। এই গুহার মুখ চারিদিক্কার অন্ধকার হইতে আরো ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। গুহাগুলা এত প্রকাণ্ড যে, উহা মানুষের রচনা বলিয়া মনে হয় নাআবার এতটা মানাই যে, নৈসর্গিক পদার্থ বলিয়াও বোধ হর না।•••

 আমরা একটুও না থামিয়া বরাবর চলিতে লাগিলাম। কিন্তু আমার 'সেই পথপ্রদর্শক একটু ইতস্তত করিতেছিল; কিন্তু একটু পরেই কি জানি কি ভাবিয়া, একটা মুখ-ঝকানি দিয়া, আমাদের সহিত আবার চলিতে