পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

লাগিল। বোধ করি, যেখানে আমাদিগকে লইয়া যাইবে মনে করিয়াছিল, সেইখানে যাইতে তাহার মনে দেবতাদির ভয় কিংবা এমনি-একটা কোন সাদাসিধা ভয়ের উদয় হইয়াছিল। এখানকার এক-একটা স্থান যে অপেক্ষাকৃত একটু বেশি ভয়ানক, তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহার মুখের ভাবে মনে হইতেছিল, সে যেন আমাকে এইরূপ বলিতেছে-“না, আর বেশিদূর গিয়া কাজ নাই—এই পর্য্যন্তই যথেষ্ট।” কিন্তু পরে সে আমার সহিত শৈলস্থলিত প্রস্তররাশির মধ্য দিয়া,—ক্যাক্‌টাস্‌-গাছ মধ্য দিয়া চলিতে চলিতে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন, গুহামুখে প্রবেশ করিল। এখনি এই স্থানটি আমার নিকট ভীষণ-সুন্দর বলিয়া মনে হইল। কিন্তু আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি, পথপ্রদর্শক আমাকে যে-স্থানটি দেখাইতে সাহস করিতেছে না, তাহার কাছে ইহা কিছুই নয়।

 ঘোড়সওয়ারদিগের ক্রীড়াস্থানের ন্যায় মুক্তাকাশ বৃহৎ প্রাঙ্গণসমূহ সেই সব প্রকাণ্ড পাষাণস্তুপ হইতে -সেই আদিমকালেব পর্ব্বত হইতে কাটিয়া বাহির করা হইয়াছে। উহার দেয়াল এত উচ্চ যে, মনে হয় যেন এখনি মাথায় ভাঙিয়া পড়িবে। দেয়ালের গায়ে,—মোটা-মোটা খাটো থামের চার থাক্ বারণ্ডা-দালন উপযুপরি স্থাপিত। এই দালানের বরাবর ধারে-ধারে অমানুসিক-দেহপ্রমাণ সারি-সারি দেবমূর্তি,—যেন নাট্যালয়ে মৃত্যুর অভিনয়ে কতকগুলা লোক অসাড় ও স্তম্ভিতভাবে দাঁড়াইয়া আছে। রাত্রির অন্ধকারে সমস্তই কালো দেখাইতেছে। এই সব দালানের মাথার উপর তারকাখচিত আকাশ ভিন্ন আর-কিছুই নাই। তারার এই অস্পষ্ট তরল আলোকে আমরা সেই বিরাট মূর্তিগুলা দেখিলাম। উহার যেন দর্শকের ন্যায় আমাদের আগমন নিরীক্ষণ করিতেছিল। | এইরূপ এক-এক-সার গুহা যে কত রহিয়াছে, তাহার ঠিকানা নাই

 এইরূপ প্রত্যেক গুহার সার, - কোন বিশেষ সময়কার লোকদিগের সমবেত উদ্যম ও প্রভূত শ্রমের ফল।