পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
২০১

 আমার পথপ্রদর্শক ছাগপালক প্রথমে ভয় পাইয়াছিল, কিন্তু আমাদের সঙ্গে এই সব ভয়ানক স্থানে পরিভ্রমণ করিতে করিতে ক্রমশ তাহার সাহস জন্মিল। এক্ষণে ঘোর - অন্ধকার একটা গুহার মধ্যে প্রবেশ করিবার সময় সে তাহার হাতল্যাণ্ঠান্‌টা জ্বালিল। আর এখন আমাদের মাথার উপর আকাশের তারা নাই—তাহার স্থানে পৰ্বতের স্থূল প্রস্তররাশি প্রসারিত। ইহা একটা ঢাকাপথ—দুই ধারের প্রাচীরের মধ্য দিয়া চলিয়া গিয়াছে। এই গুহা “গথিক্ ক্যাথিড্রালের” মধ্য-দালান-মণ্ডপের মত উচ্চ ও গভীর। মসৃণ দেয়ালের গায়ে পশুপক্ষীর মূর্তির অনুকরণে উৎকীর্ণ একপ্রকার ছোট-ছোট খিলান রহিয়াছে। গুহার ভিতরে গিয়া মনে হয়, যেন একটা বিরাটকায় জন্তুর দেহের শূন্যগর্ভ থোলের মধ্যে রহিয়াছি। এই ঘন অন্ধকারের মধ্যে আমাদের ল্যাথাটা এমন মিটমিট করিয়া জ্বলিতেছিল যে, কিছুই প্রায় দেখা যাইতেছিল না। এই দীর্ঘ দালানের মধ্যে মনে হইল, যেন জনপ্রাণী নাই। কিন্তু গুহার পশ্চাদ্ভাগে একটা আকৃতি স্পষ্টরূপে লক্ষিত হইল;— ২০ কি ৩০ ফীট উচ্চ একটি নিঃসঙ্গ | বিগ্রহ সিংহাসনে আসীন; পশ্চাৎ হইতে তাহার ছায়া মণ্ডপের খিলান-ছাদ পর্যন্ত উঠিয়াছে এবং সেই ছায়া আমাদের ল্যাষ্ঠানের চলন্ত আলোকের সঙ্গে সঙ্গে যেন নাচিয়া বেড়াইতেছে। সমস্ত স্থানটির ন্যায় এই বিগ্রহও সেই-একই শ্যামল প্রস্তরে নির্মিত; কিন্তু তাহার বিরাট দেহ লাল-রঙে রঞ্জিত। বড়-বড় শাদা চোখ;—কালে-কালো চোখের তারা যেন আমাদের দিকে অবনত; মনে হয়, যেন তাহার নৈশ শান্তির ব্যাঘাত হওয়ায় একেবারে বিহবল হইয়া পড়িয়াছে। এখানকার নিস্তব্ধতা এরূপ মুখর যে, আমাদের কথা শেষ হইয়া গেলেও, আমাদের কণ্ঠস্বরের অনুরণন অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকিয়া যায়। বিগ্রহের একদৃষ্টি-চাহুনিতে আমরা যেন স্তম্ভিত হইয়া পড়িলাম। যাই হোক, আমার পথপ্রদর্শক ছাগপালকটির এখন আর কোন ভয় নাই; সে এখন প্রত্যক্ষ দেখিয়াছে, এই সকল