পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
২০৩

বিশেষ প্রকারের ভীষণতা আছে। এই গণ্ডশৈলসমুহ, এই সব মানবাকার বিরাটমূর্তি, এই সব প্রস্তরীভূত মূর্ত্তিমান্ কষ্টগুলা, এই সব স্তম্ভিতশ্বাস সাক্ষাৎ। যন্ত্রণাগুলা—দশ শতাব্দী হইতে এই মহানিস্তব্ধতার মধ্যে নিমজ্জিত রহিয়াছে;—এ সেই নিস্তব্ধতা, যাহা একটু নিশ্বাসপাতেই মুখরিত হইয়া উঠে,—যে নিস্তব্ধতার মধ্যে আপনার পদশব্দ শুনিয়া বিচলিত হইতে হয় এবং আপনার প্রত্যেক শ্বাসপ্রশ্বাস যেন স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যায়।

 এখানে আর সমস্তই প্রত্যাশা করিতেছিলাম, কিন্তু কোন শব্দ শুনিব বলিয়া প্রত্যাশা করি নাই। কিন্তু গুহার প্রথম মণ্ডপটিতে যেই আমরা পদার্পণ করিয়াছি, অমনি হঠাৎ একটা ভীষণ শব্দ হইয়া সমস্ত স্থান কঁপিয়া উঠিল। ঘড়ির ঘুম-ভাঙানে ঘণ্টাটির কল-কাটি স্পর্শ করিলে হঠাৎ যেরূপ বাজিয়া উঠে, সেইরূপ একটা শব্দ এক সেকেণ্ডের মধ্যে গুহার গভীরতম দেশ পর্যন্ত প্রচারিত হইল। যাহারা উপরের প্রস্তররাশির মধ্যে ঘুমাইতেছিল,—চীল, পেচক, শকুনি প্রভৃতি সেই সব শিকারী পাখী জাগিয়া-উঠিয়া পাখার ঝাপটা দিতেছিল—পাশ্বপরিবর্তন করিতেছিল। ইহা তাহারই শব্দ। এই সমস্ত সমবেত-ধ্বনি গুহার স্বাভাবিক-মুখরতা-প্রভাবে প্রতিধ্বনিত হইয়া অতিরিক্তপরিমাণে বর্ধিত হইল। পরে ক্রমশ প্রশমিত হইয়া শব্দটা দূরে চলিয়া গেল,—থামিয়া গেল। আবার সেই ঘোর নিস্তব্ধতা।•••

 এই স্তম্ভপরিবেষ্টিত গম্বুজ-আচ্ছাদিত মণ্ডপটি হইতে বাহির হইয়াই মাথার উপর আবার তারা দেখিতে পাইলাম। কিন্তু এই তারাগুলা আকাশের ফাকে মাঝে-মাঝে দেখা যাইতেছে—যেন একটা গহ্বরের গভীরদেশ হইতে দৃষ্ট হইতেছে। এখন আমরা কতকগুলা মুক্তাকাশ প্রাঙ্গণের মধ্য দিয়া চলিতেছিলাম। একটা সমগ্র পর্ব্বতের আধখানা তুলিয়া-ফেলিয়া এই প্রাঙ্গণগুলা প্রস্তুত হইয়াছে। ইহা হইতে যে প্রস্তর বাহির হইয়াছিল, তাহাতে নিশ্চয়ই একটা নগর নির্মিত হইতে পারে।