পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 কিন্তু সূর্যোদয় হইবামাত্র একটা বিস্তীর্ণ লোহিতক্ষেত্র আমার সমক্ষে প্রসারিত হইল;—শুষ্কবায়ুর প্রভাবে একেবারে শুকাইয়া গিয়াছে; আর, ইতস্তত কতকগুলা মরাগাছ দেখা যাইতেছে।

 এই প্রখর দিবালোকে সেই সব শিবমন্দির দেখিবার জন্য যাত্রা করিলাম। যাহা দেখিয়াছি বলিয়া এখন স্মরণ হইতেছে, তাহা বাস্তবিক সেইরূপ কি না, আমার একবার পরখ করিয়া দেখিতে হইবে। এইবার আমি একাকীই নীচে নামিলাম; আমি এখন পথ চিনি; সেই সব শ্যামল শৈলরাশির মধ্য দিয়া, সেইসর শুষ্ক উচ্চ “ক্যাক্‌টাস্‌"—যাহা হলদেরঙের পুরাতন মোমবাতির মত একেবারে কঠিন হইয়া গিয়াছে—সেই সব ক্যাক্‌টাস্‌গাছের মধ্য দিয়া চলিলাম।

 এখন সবেমাত্র সূর্যোদয়, তবু এই সূর্যের প্রখর উত্তাপে আমার বগ্‌ যেন পুড়িয়া যাইতেছে বোধ হইল। এই দুবৃত্ত সর্ব্ব্বসংহারী প্রচণ্ড সূর্যের প্রভাবেই প্রতিদিন ভারতভূমির উপর মৃত্যুর ছায়া ক্রমশই প্রসারিত হইতেছে।•••ছড়ি-হাতে তিনজন লোক,—গরুর পাল সঙ্গে নাই, অথচ দেখিতে রাখালের মত—ক্ষেত্রভূমি হইতে উপরে উঠিয়া আমাকে নতভাবে সেলাম কবিয়া চলিয়া গেল; এরূপ শীর্ণকায় মনুষ্য আমি কখন চক্ষে দেখি নাই; বড়-বড় চোখ-জরবিকারগ্রস্ত রোগীর ন্যায় ঘোর রক্তবর্ণ। নিশ্চয়ই উহারা দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রদেশ হইতে আসিয়াছে,—যাহার ঠিক দারদেশে আমি এখন উপনীত হইয়াছি। শতসহস্র ছোট-ছোট চারাগাছ,—যাহা পূর্ব্বে স্থানে-স্থানে পর্ব্বতের গায়ে যেন গালিচা বিছাইয়া রাখিত, তাহা এখন প্রাণশূন্য—এখন যেন জমাটপশমের মত দেখিতে হইয়াছে।

 কিন্তু এখানকার জীবজন্তুরা—যেরূপ চিরকাল করিয়া থাকে—সেইরূপ এখনো পরস্পরের সহিত যুঝাবুঝি করিতেছে। মাটীর উপর ছোট-ছোট পাখীদের মৃতদেহ পড়িয়া আছে,—চীলের। উহাদিগকে কাটিয়া খণ্ডখণ্ড