পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে
২১১

করিয়াছে। সর্ব্বত্রই দেখা যায়, মোটামোটা লোভী মাকড়সা শেষাবশিষ্ট প্রজাপতিদিগকে—ফড়িংদিগকে ভক্ষণ করিবার জন্য তন্তুজাল বিস্তার করিয়াছে। নিকটস্থ জ্বলন্ত অঙ্গারের ন্যায় এই মার্ত্তণ্ডের প্রচণ্ড প্রতাপ মিনিটে-মিনিটে যেন বৃদ্ধি পাইতেছে। এই মার্কণ্ডের মহিমা শিবের মহিমারই স্যায় দারুণ অশিব।•••আজ প্রাতে শিবের ভীষণ মন্দিরে অবতরণ করিয়া শিবকে মনে মনে চিন্তা করিতেছিলাম;—ইনি সেই দেবতা, যিনি জীব সৃষ্টি করিতেছেন এবং সৃষ্টি করিয়া আবার সংহার করিতেছেন! এইবার আমি ব্রাহ্মণদের ধরণে শিবকে বেশ কল্পনা করিতে পারিয়াছি! সেই দেবতা, যিনি এক প্রকার প্রচ্ছন্ন উপহাসের সহিত উন্মত্তভাবে মনুষ্য ও পশুদিগের বংশবৃদ্ধি করিতেছেন; কিন্তু সেই সঙ্গে সেই প্রত্যেকজাতীয় জীবের জন্য সাংঘাতিক অস্ত্রে সুসজ্জিত এক একটা শত্রুরও সৃষ্টি করিয়াছেন! কি অশেষ উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়া ক্ষুদ্রক্ষুদ্র কতপ্রকার কৌশলসহকারে তিনি দংষ্ট্রা, নখর, শিং, ক্ষুধ, ব্যাধি, সর্প ও মক্ষিকার বিষ প্রস্তুত করিয়াছেন। যেখানে মৎস্যগণ ভাষিয়া বেড়ায়, সেই পুষ্করিণীর উপরিস্থ মাছধরা পাখীদের ঠোট তিনি চুচাল ও তীক্ষ্ণ করিয়া দিয়াছেন, মানুষের জন্য তিনি নানা প্রকার রোগ, অবসাদ, জরাবার্ধক্য পূর্ব্ব হইতেই চুপিচুপি সঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছেন। প্রত্যেকেরই রক্তমাংসের মধ্যে তিনি মর্ম্মন্তুদ চৈতন্যলোপী সুতীক্ষ্ণ প্রেমের কাটা প্রবিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন; সকলের জন্যই তিনি অসংখ্য ছোটখাট দুঃখ সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছেন; স্বচ্ছ নদীর জলেও তিনি শতসহস্র অদৃশ্য ঘাতক রাখিয়া দিয়াছেন;—ভীষণ অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত কীটের বীজ সেই জলে নিহিত করিয়াছেন;—যখনই সেই জল কেহ পান করিতে বাইবে, অমনি তাহারা তাহার অদ্ভুভক্ষণে উদ্যত হইবে।•••"আত্মাকে উন্নত করিবার নিমিত্তই দুঃথযন্ত্রণার সৃষ্টি।” ভাল, তাহাই যেন হইল; কিন্তু আমাদের অবোধ শিশুসন্তানেরা যে একটা বিশেষ রোগে (যে রোগটি বিশেষ করিয়া