পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

তাহাদেরই জন্য উদ্ভাবিত) রুদ্ধশ্বাস হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়, সে বিষয়ে কি বক্তব্য?•••তা ছাড়া, আমি কত হতভাগ্য ক্ষুদ্র পশুদিগের ভয়বিস্ফারিত নয়নে তীব্র যাতনা, নিষ্ফল প্রার্থনা, স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছি।•••আর ছোট-ছোট পাখীগুলা যে নির্বোধ-ব্যাধগণকর্তৃক শস্ত্রাঘাতে নিহত হয়, তাহাও কি উহাদের আত্মার উন্নতির জন্য? মাকড়সারা বায়ুস্থিত ক্ষুদ্র প্রাণীদিগকে শোষণ করিয়া যে উদরস্থ করে সে সম্বন্ধেই বা কি বক্তব্য?••এই সমস্ত অনন্ত নিষ্ঠুরতা যুগযুগান্তরব্যাপী জীব-আবর্তের উপর প্রসারিত। বিধাতার প্রতি এরূপ তিরস্কার নিতান্ত অযথা নহে; সর্ব্বকালের সকল লোকেই এই কথা বলিয়া আসিতেছে—ইহার আলোচনা করিতেছে; কিন্তু শিবের গুহার মধ্যে পুনৰ্বার অবতরণ করিয়া এ কথা আজ যেমন আমার মনে দারুণ সত্যরূপে প্রতিভাত হইল, এমন আর পূর্ব্বে কখন হয় নাই। অথচ আমি একজন সুখী পুরুষ; সুখস্বচ্ছন্দে আমার জীবনযাত্রা নিৰ্বাহ হইতেছে; দুর্ভিক্ষ আমার নিকট সহজে পৌছিতে পারে না; বিনাশের অপর কোন হেতুও আমার নিকট আপাতত উপস্থিত নাই; বড়-জোর আমি এখন—মধ্যাহ্বসূর্যের প্রচণ্ড কিরণ হইতে অথবা শুষ্ক তৃণাচ্ছন্ন কৃষ্ণচক্রধারী কেউটেসাপের দংশন হইতে আমার বিনাশের আশঙ্কা করিতে পারি। তা ছাড়া, আমার আশঙ্কার বিষয় এখন আর কিছুই নাই।...

 যখন আমি নীচের সেই বালুকা ও ধূলার ক্ষেত্রে আসিয়া পোঁছিলাম সেইখানে ডাহিনে ফিরিয়া কয়েকমিনিটের মধ্যেই আবার সেই “হাঁ-করা” প্রকাণ্ড গুহাদ্বারের সম্মুখে উপনীত হইলাম।

 আজ প্রাতে এই ভীষণ মন্দিরে প্রবেশ করিয়া কোন ভীষণ শব্দ শুনিতে পাইলাম না। চীল, শকুন কিংবা বাজ, যাহারা মন্দিরের ভিতর-ছাদে বাসা করিয়া থাকে, তাহারা ইতঃপূৰ্বেই শিকারে বাহির হইয়াছে। এখন চতুদ্দিক্‌ নিস্তব্ধ। বিগত দ্বিপ্রহর রাত্রির নিস্তব্ধতার ন্যায় এ নিস্তব্ধতা তত ভীষণ নহে।