পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে
২১৫

গান গাহিতেছে, অথবা চীৎকার করিয়া কি বলিতেছে। উহাদের উদর ভিতরদিকে ভয়ানক ঢুকিয়া গিয়াছে; চামড়ার খালি বোতলের মত কুঁচকিয়া চুপসিয়া গিয়াছে; বড় বড় চক্ষু;—কেন এত দুঃখ যন্ত্রণা সহিতে হইতেছে ভাবিয়াই যেন বিস্ময়বিস্ফারিত।

 এই গানের পূর্ণ প্রচণ্ডতা হৃদয়ঙ্গম করিতে হইলে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে যাইতে হয়, রাজস্থানে যাইতে হয় যেখানে, শুধু একমুষ্টি চাউলের অভাবে শতসহস্র লোক মৃত্যুমুখে পতিত হইতেছে। এই গুহা হইতে সেই সব স্থান প্রায় দেড়শতক্রোশ দূরে।

 এই প্রদেশে,মৃত বন, মৃত জঙ্গল, সমস্তই মৃত। যে বৃষ্টি পূর্ব্ব্বে আরবসাগর হইতে প্রেরিত হইত, কিয়ৎবৎসর হইতে তাহার অভাব হইয়াছে, অথবা উহা ভিন্নপথে চলিয়া গিয়াছে;—বেলুচিস্থানের মরুভূমির উপর নিরর্থক ছড়াইয়া পড়িয়াছে। স্রোতস্বিনীতে জল নাই; নদী শুকাইয়া গিয়াছে; তরুলতা আর হরিৎ পরিচ্ছদ ধারণ করে না।

 আমি এখন রৎলাম ও ইন্দোরের রাস্তা ধরিয়া রেলপথে দুর্ভিক্ষপ্রদেশে যাইতেছি। এক্ষণে সমস্ত ভারতই লৌহপথে ক্ষতবিক্ষত। যে ট্রেণে যাইতেছি, উহার সমস্ত গাড়িই প্রায় খালি;—যাত্রীর মধ্যে দুইটিমাত্র ভারতবাসী।

 আমার চোখের নীচে দিয়া—কয়েকঘণ্টাকাল - কেবলই বন চলিয়াছে; —ইহা তাণীবন নহে; এই সব বনতরু কতকটা আমাদের দেশীয় গাছের মত। বনগুলা যদি এত বড় না হইত, উহার দিগন্তদেশ যদি বনজঙ্গলে আচ্ছন্ন না হইত, তাহা হইলে আমাদের দেশের বন বলিয়া ভ্রম হইতেও পারিত। সুকুমার শাখা, ধূসর শাখা। উহার সাধারণ রং—আমাদের দেশের ডিসেম্বরের “ওক"-গাছের পাতার মত। আমাদের ফ্রান্সদেশে, শরতের শেষভাগেই এইরূপ দৃশ্য দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এখন এপ্রিলমাসে ভারতর্ষে রহিয়াছি। গ্রীষ্মদেশসুলভ প্রখর উত্তাপ, অথচ