পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

বহিদৃশ্য শীতদেশের মত। আজ ভ্রমণের এই প্রথমদিবসে, উৎকট দুঃখকষ্টের চিহ্ন এখন পর্য্যন্ত কোথাও প্রকাশ পায় নাই; তবে মনে হয়,। প্রকৃতির কি-যেন-একটা বিপর্য্যয় ঘটিয়াছে; সমস্ত দেশ নিরুপায় হইয়া, যেন একটা উদাসভাব ধারণ করিয়াছে; নিঃশেষিতশক্তি কোন গ্রহের যেন মরণযন্ত্রণা উপস্থিত হইয়াছে।

 আমাদের য়ুরোপের পিতামহ্‌ ভারত-বলা বাহুল্য, এখন ধ্বংসাবশেষের দেশ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। প্রায় চারিদিকেই সেই সব মৃতনগরের উপচ্ছায়া দেখিতে পাওয়া যায়—যাহা শত-শত বৎসর, সহস্র সহস্র বৎসর পূর্ব্বে ধ্বংস হইয়া গিয়াছে; সেই সব নগর, যাহার নাম পর্য্যন্ত এখন বিলুপ্ত হইয়াছে, কিন্তু যাহা এককালে খুব বড় ছিল;—পর্ব্বতাদির উপর রাজমহিমায় অধিষ্ঠিত হইয়া, পাদশায়ী অতলস্পর্শ অবলোকন করিত। তিনক্রোশ দীর্ঘ প্রাকারাবলী, প্রাসাদ ও মন্দিরাদি এক্ষণে পরিত্যক্ত হইয়া কপিবৃন্দ ও ভীষণ সর্পের আবাস হইয়া পড়িয়াছে।•••এই সব ভগ্নাবশেষের নিকটে -আমাদের সেকেলে দুর্গ প্রাসাদের চূড়ামন্দির, নগরপালের আবাসগৃহ, 'আমাদের সেই সামন্ত-যুগের আর সমস্ত কি ক্ষুদ্র বলিয়াই মনে হয়!

 আমাদের যাত্রাপথের বরাবর বারেবারে একটার পর একটা নগর ও অরণ্যের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাইতেছে;—সন্ধ্যা পর্য্যন্ত সেই একই জ্বালাময় বায়ুরাশির মধ্যে নিমজ্জিত। এই উদ্ভিজ্জাবশেষের উপর,সেই গল্পকাহিনীর প্রাচীন মৃতনগরাদির অস্থিরাশির উপর—প্রখর সূর্য অস্ত যাইতেছে—ধূলায় মলিন, শীতঋতুসুলভ পাণ্ডুবর্ণ।

 পরদিন, অসীম জঙ্গলের মধ্যে জাগ্রত হইলাম। সে প্রথম-গ্রামটিঙ্গে আসিয়া গাড়ি দাঁড়াইল, গাড়ির চাকার ঘর্ঘশব্দ ও লোহালক্কড়ের ঝন্‌ঝনানি থামিমাত্র, একটা কোলাহল—একটা বিশেষধরণের কোলাহল উঠিল; কি জন্য, কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না—কিন্তু শুনিলে শরীরের রক্ত, যেন জমাট হইয়া যায়। আবার সেই ভীষণ গান—ইহা আমাকে ছাড়িবে