পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ও পয়সা। ঐ ক্ষুধিত শিশুরা, পশুদের ন্যায়, পরস্পরকে মাড়াইয়া, হুম্‌ড়ি খাইয়া সেই সমস্তের উপর আসিয়া পড়িতেছে। ঐ পয়সাগুলা কি উহাদের কাজে আসিবে? তবে কি গ্রামের হাটবাজারে এখনো কিছু খাদ্যসামগ্রী আছে?—উহা শুধু তাহাদেরি জন্য, যাহাদের কিনিবার সম্বল আছে। আমাদের ট্রেণের পিছনেই ত চাউল-বোঝাই চারিটা মালগাড়ি যোড়া রহিয়াছে এবং প্রতিদিনই এই সব মালগাড়ি যাতায়াত করিতেছে। কিন্তু এই চাউল উহাদিগকে দেওয়া হইবে না; উহাদিগকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য উহা হইতে একমুষ্টি কিংবা দুইচারিটি দানাও দেওয়া হইবে না; উহা তাহাদেরি জন্য, যাহাদের এখনো কিছু অর্থ আছে—যাহারা উহার মূল্য দিতে সমর্থ।

 এখনো কিজন্য গাড়ি ছাড়িতেছে না? কিজন্য এই বিষাদতমসাচ্ছন্ন গ্রামের সম্মুখে এতক্ষণ অপেক্ষা করা—যেখানে মিনিটে-মিনিটে ক্ষুধিতের দল আসিয়া জমা হইতেছে এবং সেই দুর্ভিক্ষের লোমহর্ষণ গান অবিরত গাহিতেছে।

 চতুর্দ্দিকে, মাটি এত শুষ্ক গুঁড়গুঁড়া হইয়া গিয়াছে যে, পূর্ব্বে যাহা ধানের ক্ষেত ছিল, এক্ষণে তাহা ভস্মাচ্ছন্ন মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছে। ঐ দেখ কতকগুলি রমণী—রমণীর কঙ্কাল বলিলেও হয়—উহাদের স্তন শুষ্কচামড়ার টুকরার মত ঝুলিতেছে। উহারা পূতিগন্ধি ভারী বোঝার গাঁট মাথায় লইয়া, বিক্রয়ের আশায়, তাড়াতাড়ি হাঁপাইতে হাঁপাইতে আসিয়াছে;—এ সমস্ত সেই সব গরুর চামড়া—যাহারা অনাহারে মরিয়াছে এবং পরে যাহাদের গাত্র হইতে উহার ছাল ছাড়াইয়া লইয়াছে। গরুদের খাওয়াইতে পারে না বলিয়া, আধ-মরা জীবন্ত গরুদের মূল্য চারিআনা পর্য্যন্ত নামিয়া গিয়াছে। গোমাংস খাইয়া কেহ যে ক্ষুন্নিবৃত্তি করিবে, তাহার জো নাই; কেন না, এই ব্রাহ্মণ্যের দেশে, প্রাণ গেলেও কেহ এ কাজ করিবে না। তবে এই চামড়াগুলা কে ক্রয় করিবে?—এই সব