পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদয়পুরমন্দিরের ব্রাহ্মণ।
২২১

উহাদের স্বর কণ্ঠের গভীরদেশ হইতে নিঃসৃত হইতেছে। ইহারা গ্রামপল্লির লোক, কিংবা ঐ সব লোকের ভগ্নাবশেষ বলিলেও হয়। ইহারা দেহভার কোনপ্রকারে বহন করিয়া সহরের দিকে চলিয়াছে। উহারা শুনিয়াছে, সেখানে এখনো একমুষ্টি আহার জুটিতে পারে। কিন্তু চলিতে চলিতে প্রায়ই উহারা পথের মাঝে মুচ্ছিত হইয়া পড়ে; দেখা যায়, কতকগুলা লোক ঘননিবিড় ধূলারাশির উপর ইতস্তত শুইয়া আছে; ক্রমে যন্ত্রণার ছটফটানিতে তাহাদের সর্ব্বাঙ্গ ধূলায় আচ্ছন্ন হইয়া যায়; তথন উহাদের নগ্নদেহ কঙ্কালের বর্ণ ধারণ করে। এই পথের ধারেই উদয়পুর| মহারাজের প্রাসাদের ঘের-উদাস, বিষাদময়। কতকগুলা মসজিদ, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ, মর্ম্মর প্রস্তরের ও অন্যান্য প্রস্তরের চতুষ্ক (kiosque), মৃত মহারাজদিগের অগ্নিসৎকারের স্থান, কতকগুলা গম্বুজওয়ালা ইমারৎ, কতকগুলা মরা-গাছ, যাহার শাখার উপর কতকগুলা বানর বসিয়া আছে। -এই সমস্ত প্রাচীর ছাড়াইয়া উঠিয়াছে, দেখিতে পাওয়া যায়।

 দ্বারদেশে—উচ্চ ধবল প্রাকারাবলীর দ্বারদেশে, যেখানে খোলা তলোয়ার হস্তে কতকগুলা সিপাহী পাহারা দিতেছে—দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট হতভাগ্য লোকদিগের জনতা প্রবল বন্যার ন্যায় সবেগে আসিয়া যেন কল্-কপাটের সম্মুখে আটকাইয়া পড়িয়াছে। এইখানে উহারা সমবেত হইয়া হস্ত প্রসারিত করিয়া রহিয়াছে। কেহ যে উহাদের গতিরোধ করিতেছে, এরূপ নহে; কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় নগরের এই সব প্রবেশপথগুলিই ভিক্ষুকদিগের মনোমত স্থান।

 তিন শতাব্দী হইল, উদয়পুরনগর স্থাপিত হয়। ইহারই পূর্ব্বদিকে কয়েকক্রোশ দূরে পুরাতন রাজধানী চিতোরের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। এই উদয়পুর ইহারি মধ্যেই যেন জরাজীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে; সমস্ত চুনকাম-করা, মনে হয় যেন শুভ্র শোকবস্ত্রে আচ্ছাদিত। ইহার অভ্যন্তরে কতক গুলি দেবমন্দির,—শাদা-থাম, শাদা চূড়া; যেটি সর্ব্বাপেক্ষা বড় ও যাহার মাহাত্ম্য