পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদয়পুরমন্দিরের ব্রাহ্মণ।
২২৩

ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম তমসাবুত হইয়া পড়িয়াছে;—সাঙ্কেতিক রূপকের মধ্যে যে অর্থ প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে, তাহা এক্ষণে উহারা অবগত নহে।

 “আমরা যে দেবতার পূজা করি, সেই দেবতার পরমভক্ত করণসিংহের পুত্র,—রাজশ্রী জগৎসিংহ। ১৬৮৪ সালে সিংহাসনে আরোহণ করিয়া তিনি এই বৃহৎ মন্দিরের নির্ম্মাণকার্য্য আরম্ভ করাইয়া দেন। এই মহারাজা সরোবরের উপর আর ও দুইটি মন্দির নির্ম্মাণ করান। উহাদের নির্ম্মাণে ২৪ বৎসর লাগে। উদঘাটন-অনুষ্ঠানের সময় যখন আমাদের দেবতা বিগ্রহমন্দিরের মধ্যে স্থাপিত হয়, সেই ১৭০৮ সালে, পার্শ্ববর্তী অনেক রাজরাজড়া অনুচরবর্গের সহিত মহাসমারোহে এখানে আসিয়াছিলেন, তাহাদের সঙ্গে বিস্তর হাতী আসিয়াছিল।”

 ঐ দুই ভায়ের মধ্যে একজন এইরূপ আমার নিকট বর্ণনা করিল। তখন বেলা দ্বিপ্রহর,—সমস্ত নিস্তব্ধ; পান্থশালার ভিতরে আধো-আধো অন্ধকাব;—সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ; রৌদ্র, মাছি, শুষ্ক বাতাস, দুর্ভিক্ষের বাতাস, কিছুই ভিতরে প্রবেশ করিবার জো নাই। উদয়পুরের মন্দিরাদিসম্বন্ধে, পৌরাণিক সমস্ত দেবদেবীর সম্বন্ধে, ইহাদের অগাধ পাণ্ডিত্য; কিন্তু মনুষেব অনন্ত আশার কারণ কি—পরলোকসম্বন্ধে উহাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টি কিরূপ—এ সমস্ত বিষয় প্রশ্ন করায় উহারা যে উত্তর করিল, তাহা হইতে আমার কিছুই বোধগম্য হইল না; তৎক্ষণাৎ যেন আমাদের পরস্পরের মধ্যে সমস্ত সংস্রব চলিয়া গেল; আমাদের মন যে একজাতীয়, তাহা যেন আর অনুভব করিতে পারিলাম না। আমাদের মধ্যে যেন একটা তমিস রজনীর যবনিকা পড়িয়া পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিল। পুরোহিতসম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক যেরূপ সচরাচর হইয়া থাকে, উহারাও সেইরূপ দিব্যদর্শী, কিন্তু আবার সেইরূপ সরলমতি; উহারা কোন রহস্যেরই ব্যাখ্যা করিতে পারে না।

 এই দুই পুরোহিত প্রতিদিনই আমার জন্য কিছু-না-কিছু সাদাসিধা