পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

পুরুষ, সুঠাম-সুশ্রী, নগ্নকায়, দীর্ঘকুন্তল-পাথরের ন্যায় পাংশুবর্ণ একপ্রকার চূর্ণে উহাদের আপাদমস্তক আচ্ছন্ন।

 প্রতিদিন সকল সময়েই—যখনই ঐদিক্‌ দিয়া যাইবে—তখনি দেখিতে পাইবে,—ঐ তিনজন সন্ন্যাসী, ঐ অনাবৃত কুটীরে, বৌদ্ধধরণে আসনবদ্ধ হইয়া, স্থিরভাবে সরোবরের সম্মুখে বসিয়া আছে। সরোবরের জলে পর্ব্বতের ছায়া,ঘনঘোর অরণ্যের ছায়া,—উদয়পুর-রাজপ্রাসাদের ছায়া বিপরীতভাবে প্রতিবিম্বিত।

 শুনগরের পশ্চাদ্ভাগে,গবাক্ষবিশিষ্ট সিংহদ্বার পার হইবামাত্র, সহসা এই নিস্তব্ধ বনভূমির আরম্ভ হইয়াছে দেখিতে পাওয়া যায়;— চতুর্দিকৃস্থ শৈলচূড়ার উপর দিয়া চলিয়া অবশেষে সুদূর অরণ্যে, ব্যঘ্রসঙ্কুল জঙ্গলে উহা মিশিয়া গিয়াছে।

 মধ্যবনের গাছগুলা, লঘুশাখাবিশিষ্ট গুল্মতরুগুলা, কতকটা আমাদের দেশের মত। আমাদের শরতের শেষভাগে যেরূপ ফুল-ফুটিয়া থাকে, সেইরূপ খুব দুল ফুটিয়াছে; যদিও এখানে এখন বসন্তকাল, গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বসন্তকাল; -তবু বাতাস আগুনের মত। কিন্তু ভারতের অন্যান্য অংশের ন্যায় এখানকার সুন্দর বনভূমিটিও নিশ্চল-নিস্পন্দ এবং এই বসন্তকালেও সমস্তই যেন মৃতকল্প। তিনবৎসর ধরিয়া এইরূপ চলিতেছে।

 নগরদ্বারের এত নিকটে থাকিয়াও এই ছায়াময় স্থানটি যে এমন নিস্তব্ধ ও শান্ত রহিয়াছে, ইহাই আশ্চর্য্য। নগরের অপরপার্শ্বে ই সমস্ত গতিবিধি ও লোকের চলাচল; ধ্যানমগ্ন তিনজন সন্ন্যাসীর সম্মুখ দিয়া এ রাস্তায় কেহ প্রায় যাতায়াত করে না।

 এই বনে কৃষ্ণসার আছে, বানর আছে, ঘুঘু ও টিয়াজাতীয় হরেকরকম পাখী মাছে। বড় বড় জঁকাল ময়ূর দলে-দলে বিচরণ করিতেছে। মরাগাছে মধ্যবর্তী স্থানে, শাদাটে ঝোপঝাড়ের তলায়, ভস্মাভ মৃত্তিকার উপর, এই ময়ূরগুলা সারীবন্দি হইয়া দৌড়িতেছে দেখা যায়;—পুচ্ছের