পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদয়পুরমন্দিরের ব্রাহ্মণ।
২২৯

কি চমৎকার উজ্জ্বল প্রভা! হরিদ্বর্ণ ধাতুখণ্ড সমূহের যেন একএকটা সমষ্টি। এই সব পশুপক্ষী ছাড়া রহিয়াছে—কিন্তু ইহাদিগকে ঠিক “বুনো” বলা যায় না; কেন না, এদেশে মানুষেরা ইহাদিগকে হত্যা করে না, তাই আমাদের দেশের মত, ইহারা মানুষ দেখিয়া পালায় না। পর্ব্বতের অপরপার্শ্বে ব্যাঘ্রদি আছে বটে, কিন্তু এই সুরম্য বনে উহাদিগকে বিচরণ করিতে কস্মিনকালেও কেহ দেখে নাই॥

 সরোবর প্রদক্ষিণ করিয়া যখন এখানে পৌঁছিলাম, ঠিক রাস্তার ধারে নিষ্পন্দনিশ্চল, প্রস্তরবর্ণ এই তিনজন অদ্ভুত সন্ন্যাসীর প্রথম দর্শনেই, আমার অন্তরে একপ্রকার অস্পষ্ট অতি প্রাকৃতিক ভয়ের সঞ্চার হইল। পাষাণপ্রতিমার সহিত প্রভেদ এই যে, ইহাদের লম্বা চুল, গোঁপ, ভুরু সমস্তই কালো; উহাদের নেত্রের অচল স্থিরদৃষ্টি দেখিয়াই যেন একটু ভয় হয়, তা ছাড়া, আর কিছুই জানা জায় না।

 বয়ঃক্রম ২০ বৎসর; ইহারা সন্ন্যাসধর্ম্ম্মে নবব্রতী। তপশচার্য্য ও ব্রতউপবাস সত্ত্বেও উহাদের সুন্দর দেহগঠনে কোনপ্রকার পরিবর্তন উপস্থিত হয় নাই। আসনপীড়ি হইয়া বহুকাল একভাবে বসিয়া থাকিলে, পা শুকাইয়া শীর্ণ হইবার কথা, কিন্তু এখনও তাহা হয় নাই—পা এখনও বেশ স্থূল ও একটু মেয়েলী-ধরণের। চূর্ণলিপ্ত ললাটের উপর শৈবচিহ্ন লালরঙে অঙ্কিত; হঠাৎ রাস্তার সং বলিয়া মনে হইতে পারি, কিন্তু উহাদের চোখের দৃষ্টি এনি স্নিগ্ধগম্ভীর যে, সে ভাব একটুও মনে আইসে না।

 উঁহাদের পশ্চাতে, কুটীরের মধ্যে, কতকগুলি তাম্রসামগ্রী,বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন—সুশৃঙ্খলরূপে সজ্জিত রহিয়াছে। উহাদের প্রাত্যহিক প্রাতঃস্নানে ও মিতাঁহারে এই সমস্ত সামগ্রী ব্যবহৃত হয়। উহাদের মাথার উপর গাছের মরা-ডালপালা প্রসারিত এবং ইহা পাখীদের একটা জটল্লার স্থান। চারিদিক্‌কার শুষ্কতায় অতিষ্ঠ হইয়া,—টিয়া,