পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৩৫

রহিয়াছে। আহা! যেন রূপের হাট বসিয়া গিয়াছে;—মল্‌মল্‌বস্ত্রে ঢাকা কি অনিন্দ্যসুন্দর বক্ষোদেশ!

 মহারাজ পর্য্যন্ত পৌঁছিতে, আরো কত খুঁড়িপথ আরো কত প্রাঙ্গণ। পার হইতে হইল—যেখানে, শাদা মার্ব্বেলের খিলানবীথির মধ্যে, বড়-বড় নারাঙ্গিগাছে ফুল ফুটিয়া আছে এবং তাঁহার গন্ধে চতুর্দিক আমোদিত। কত প্রবেশ-দালান নাগরাজুর ভারে ভারাক্রান্ত! প্রত্যেক কোণে, দীর্ঘ-অসিধারী কত লোক। ইদুরকলের মত কত সুঁডিপথ; কত পুরাতন অন্ধকেরে সিঁড়ি—যাহার ধাপগুলা দুরারোহ ও পিছল; -এরূপ খাড়া যে, উঠিতে ভয় হয়;—উহা পুরু দেয়ালগাঁথুনির মধ্য হইতে কাটিয়া বাহির করা অথবা আদৎ পাথরে গঠিত। ছায়ান্ধকারের মধ্যে যেখানে-সেখানে রক্ষিপুরুষ; যেখানে-সেখানে নাগরাজুতার ছড়াছড়ি। কুলুঙ্গির গভীর দেশ হইতে কত দেবতা আমাদিগকে নিরীক্ষণ করিতেছেন। কত শৈলমঞ্চের উপর দিয়া, উপযুপরি-বিন্যস্ত কত ঘরের উপর দিয়া, খুব উচ্চে উঠিয়া, অবশেষে একটা দ্বারদেশে আসিয়া উপনীত হইলাম। যে কর্ম্মচারী আমাকে পথ দেখাইয়া লইয়া যাইতেছিল, সে এইখানে আসিয়া সসম্ভ্রমে থামিল এবং মৃদুস্বরে আমাকে বলিল—"এইখানে মহারাজ আছেন। আমি একাকীই প্রবেশ করিলাম।

 মার্ব্বেল-খিলান-সমূহের উপর একটা শুভ্র অলিন্দ প্রসারিত;—তলদেশে শুভ্র বিশাল ছাদ; সেই জমির উপর, তুষারশুভ্র একটা চাদব পাতা। রক্ষিপুরুষ কেহ নাই, আবা আদিও নাই। অন্তরীক্ষবৎ এই বিমল নিস্তব্ধতার মধ্যে—দুইটিমাত্র সোনালি গিটি:করা একইরকমের কেদারা পাশাপাশি স্থাপিত। যিনি একাকী দণ্ডায়মান হইয়া হস্ত প্রসারিত করিয়া আছেন, তাঁহাকে দেখিয়াই চিনিলাম তিনি সেই অশ্বারোহী পুরুষ, যাহার উদ্দেশে সেদিন সায়াহ্নে, বনের সন্ন্যাসিত্রয় স্বকীয় মুখরাগ সম্পাদন কখিতেছিল। ইহার পরিচ্ছদ শুভ্র ও সাদাসিধা; কণ্ঠে নীলমণির হার।