পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 এক্ষণে সেই গিটির হাল্কা চৌকির উপর আমরা উপবেশন করিলাম। দস্তুরমত আদবকায়দার সহিত একজন দোভাষী নিঃশব্দে আমাদের পশ্চাতে আসিয়া দাড়াইল। পাছে তাহার নিশ্বাসবায়ু মহারাজের দিকে যায়, এইজন্য যখনই সে কথা কহিতেছে, অমুনি একটা শাদা রেশমের রুমাল নিজের মুখের সম্মুখে ধারণ করিতেছে। এই। সতর্কতার কোন প্রয়োজন দেখি না; কেন না; তাহার দন্তপংক্তি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও তাহার নিশ্বাস বেশ বিশুদ্ধ।

 মহারাজা স্বল্পভাষী; সহজে কেহ ইহার দর্শন পায় না; তথাপি, ইহাতে কেমন-একটা “মোহিনী” আছে—কেমন-একটি লালিত্য আছে; অতীব মার্জিত শিষ্টতার সহিত কেমন-একটা সঙ্কোচের ভাব মিশ্রিত —যাহা বড়-বড় লাটদিগের মধ্যেই প্রায় দেখা যায়। প্রথমেই তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তাঁহার দেশে আসিয়া আমি যথোচিত আদর-যত্ন পাইয়াছি কিনা;—যে গাড়িঘোড়। তিনি আমার জন্য পাঠাইয়াছেন, তাহা আমার মনোমত হইয়াছে কি না। এইরূপ নিতান্ত সাধারণধরণের সাদামাটা কথা দিয়া আমাদের কথোপকথন আরম্ভ হইল; মাঝে-মাঝে থামিয়া যাইতে লাগিল—বাধিয়া যাইতে লাগিল। কেন না, আমাদের উভয়ের স্বাভাবিক ও কৌলিক সংস্কারের মধ্যে আকাশপাতাল প্রভেদ। কিন্তু তাহার পর যখন য়ুরোপের কথা উপস্থিত হইল, যে দেশ হইতে আমি আসিয়াছি তাহার কথা উপস্থিত হই, যে দেশে আমি শীঘই যাইব সেই পারস্যদেশের কথা উপস্থিত হইল, তখন আমি দেখিতে পাইলাম—যদি আমাদের মধ্যে এই সমস্ত বাধা না থাকিত, তাহা হইলে আমাদের পরস্পরের মধ্যে কত কৌতূহলজনক নূতন-নূতন কথার বিনিময় হইতে পারিত।••

 এই সময়ে একজন আসিয়া মহারাজকে জানাইল,—যেখানে তিন সন্ন্যাসীর বাস, সেই রমণীয় বনে সান্ধ্যভ্রমণার্থ অশ্বারোহণে বাহির হইবার