পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

প্রত্যেক গোলাপটি ২০ রকমের বিভিন্ন চীনেমাটির দ্বারা রচিত। আর-এক ঘরে গিয়া দেখিবে—জলের গাছপালা; পদ্মের গাছ; সেই সঙ্গে বক। ও মাছরাঙা পাখী। এইরূপ বিচিত্র না-কাজের ধৈর্যশালী কারিকরেরা এখনো সেইখানে রহিয়াছে। উহার মাটির উপর উবু হইয়া বসিয়া হাজার-হাজার রঙিন টুকরা-কাচ হইতে, পল্লব ও পাপড়ি খুদিয়া বাহির করিতেছে। সম্প্রতি একটা ঘর শেষ হইয়াছে;—শেয়াল-সবুজ দেয়ালের গায়ে, বড়-বড় লাল গোলাপের নক্সা ছাড়া সেখানে আর কিছুই নাই। এই ঘরটিতে, প্রাচীনধরণের সাজসজ্জা যেরূপভাবে বিন্যস্ত, তাহাতে আমাদের দেশে বাহাকে “নুতন শিল্পকলা” বলে, তাহাই মনে করাইয়া দেয়;—মধ্যস্থলে একটি স্ফটিকের খাট; দেয়ালে যেপ্রকার সবুজ রং-সেই রঙের মশারি; এবং পদানাগুলির সেরূপ লাল রং, সেই রঙেরই মমলের গদী।

 একটি ক্ষুদ্র পুরাতন দেবমন্দির;—এরূপ জীর্ণ যে, সরোবরের জলে এখনি খসিয়া পড়িবে বলিয়া মনে হয়; এই মন্দিরের পাদদেশে, একখানা নোকা আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। আমি সেই নৌকায় উঠিলাম। মাঝিমাল্লারা আমাকে ক্ষুদ্র দ্বীপটির অভিমুখে লইয়া গেল। একটা জোরবাতাস উঠিল। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময়, এইরূপ বাতাস উঠিয়া থাকে। ধূলারাশি ও মৃত্যু বিকীর্ণ করিয়া এই বাতাস সমস্ত রাজস্থানে গুরিয়া বেড়াইতেছে; কিন্তু এই সরোবরে আসিয়া এই বাতাস বেশ শীতল ও বিমল ভাব ধারণ কবিয়াছে; এবং আমাদের চারিধারে অতীব ক্ষুদ্র নীল লহরীলীলা উঠিয়াছে।

 দুইটি দ্বীপের মধ্যে যেটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, সেই দ্বীপের প্রাসাদটি একশত বৎসরের হইবে; উহা সুগভীর সরোবরের মধ্যস্থলে অবস্থিত। সুতরাং এম্‌নিই ত লোকালয় হইতে বিচ্ছিন্ন,—তাতে আবার প্রাচীরবদ্ধ, হওয়ায়, আরো নিভৃতভাব ধারণ করিয়াছে। ছোট-ছোট উদ্যানগুলিও