পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

হয়। এই প্রাসাদগুলি অপেক্ষাকৃত আরো বিশাল, আরো ভগ্নদশাপন্ন। ঘাটের সিঁড়ি প্রকাণ্ড;—ধাপগুলি শাদা ধপ্‌ধপে—জলে অর্দ্ধনিমজ্জিত; সরোবরের সমরেখাপাতে, সোপানের ধারে-ধারে বড়-বড় পাথরের হাতী সারি-সারি সজ্জিত;—মনে হয় যেন তাহারা নৌকার আগমন নিরীক্ষণ করিতেছে। পার্শ্ববর্ত্তী ছোট দ্বীপটির ন্যায়, এখানকার বিষন্ন উদ্যানগুলিও প্রাচীরবদ্ধ; কিন্তু এই সকল প্রাচীরে নক্‌সা-কাজের খুঁটিনাটি আরো বেশী;—কারিকরদিগের ধৈর্য্যের পরিচয় আরো বেশী পাওয়া যায়। দক্ষিণাত্যের বড়-বড় তালগাছ এখানে আছে; এই সব তালগাছ এখানে বন্য-অবস্থায় বর্দ্ধিত হয় না;—রাজপ্রাসাদেরই চতুর্দ্দিকে বিলাসসামগ্রীরূপে সংরক্ষিত। নারাঙ্গিকুঞ্জের উদ্গিরিত সৌরভে চারিদিক্‌ আমোদিত; মরাপাতার উপর নারাঙ্গিফুলের পাপ্‌ড়ি ঝরিয়া-পড়িয়া গাছের তলদেশ ছাইয়া গিয়াছে;—মনে হয় যেন জমাট শিশিরবিন্দুর একটা স্তর পড়িয়াছে। আমরা যখন প্রবেশ করিলাম, তখন একটু বেশী বেলা হইয়া গিয়াছে;—উচ্চ ও খাড়া পর্ব্বতগুলার পশ্চাতে সূর্য্য অনেকটা ঢলিয়া পড়িয়াছে; তাই সরোবরের উপরে যেন একটু আগেভাগেই সন্ধ্যা দেখা দিয়াছে। ইহা টিয়াপাখীদের শয়নকাল। এই সব প্রাচীরবদ্ধ সুরক্ষিত নারাঙ্গিগাছের মধ্যেই উহাদের সাধের বাসা। সুবম্য বনভূমি হইতে, সবুজ মেঘের মত উহারা দলে-দলে উড়িয়া আসিতেছে, দেখিতে পাওয়া যায়। এখানকার ম্রিয়মাণ গাছের পাতাগুলি অপেক্ষা উহারা বেশী সবুজ। চতুর্দ্দিকস্থ বনরাজি শীতঋতুসুলভ ধূসরবর্ণ ধারণ করিয়াছে; এমন কি, জলের ধারেও, সমস্ত উদ্ভিজ্জ “হল্‌দে মারিয়া’’ যাইতেছে। শুষ্ক বায়ু—দুর্ভিক্ষের বায়ু—সোঁসোঁ করিয়া বহিতেছে;—ইহার জোর যেন ক্রমেই বাড়িতেছে। এই দ্বীপে, এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে, সন্ধ্যার বিষাদচ্ছায়া আরো যেন ঘনীভূত হইয়া, ভয় ও উদ্বেগ বর্দ্ধিত করিতেছে।