পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৪১

গোলাপী রঙের সুন্দর পুরী।

 আরো দেড়ক্রোশ উত্তরাভিমুখে। উদয়পুরের পর হইতে—মরুভূমির পর মরুভূমি। সমস্ত ভূমিই অভিশাপগ্রস্ত;—মাটির উপরে যেন একটা শাদা ভস্মের স্তর পড়িয়াছে; যেন একটা আগ্নেয়গিরির ব্যাপক অগ্ন্যুচ্ছাসে এই ভস্ম চারিদিকে বিকির্ণ হইয়াছে। পূর্ব্বে যেখানে জঙ্গল ছিল, গ্রাম ছিল, কৃষিভূমি ছিল—এখন সমস্তই একাকার,—একই বিষণ্ন রঙে রঞ্জিত। কিন্তু এই উদাস উজাড় মরুপ্রদেশেও একটি সুরম্য নগর, পূর্ণ প্রাচ্যমহিমায় বিরাজ করিতেছে। সে সকল বীথি, সমুচ্চ দস্তুর প্রাকারাবলী, ছুচালখিলান-সমন্বিত দ্বারসমূহ এইখানে আসিয়া মিলিত হইয়াছে,—উহা শুভ্রপরিচ্ছদধারী অশ্বারোহী পুরুষে, পীত কিংবা লোহিত অবগুণ্ঠনে আবৃত রমণীবৃন্দে পরিপূর্ণ। গরুর গাড়ি যাতায়াত করিতেছে। সুসজ্জিত উটেরা সারিবন্দি হইয়া চলিয়াছে। সু-কালের মত চারিদিকে বিচিত্র রঙের ছড়াছড়ি—জীবন-উদ্যমের উদ্দামস্ফূর্ত্তি।

 কিন্তু প্রাকারাবলীর পাদদেশে, ছেঁড়া ন্যাক্‌ড়ার বস্তার মত ও সব কি দেখা যায়?—উহার মধ্যে কতকগুলা মনুষ্যের আকার প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। জমির উপর ঐ লোকগুলা কে? উহারা কি মাতাল? উহারা কি রুগ্‌ণ? আহা! কতকগুলা শীর্ণকায় জীব, কতকগুলা অস্থিপঞ্জর, কতকগুলা “মমি” শব! কিন্তু না, এখনো যে নড়িতেছে; চোখের পাতা পড়িতেছে, চোখ মেলিয়া চাহিতেছে! শুধু তাহা নহে, খাড়া হইয়া উঠিয়াছে। জঙ্ঘাকার লম্বা-লম্বা অস্থিখণ্ডের উপর ভর দিয়া টল্‌মল্‌ করিতেছে।

 প্রথম দ্বারটি পার হইবার পরেই আর একটি দ্বার! এই দ্বারটি ভিতরকার প্রাচীরগাঁথনির মধ্য হইতে কাটিয়া বাহির করা। দস্তুর চুড়াদেশ পর্য্যন্ত এই প্রাচীরটী গোলাপী রঙে রঞ্জিত;—গোলাপী রঙের জমির উপর ভারতীয় নক্‌সার ধরণে নিয়মিত-অস্তরে শাদা শাদা ফুলের নক্‌সা