পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

তাহাদের পৃষ্ঠে দুইজন করিয়া লোক উপবিষ্ট—একজনের পিছনে আর একজন। এই সকল উষ্ট্র অষ্ট্রিচ্‌পাখীর মত সম্মুখে ঘাড় বাড়াইয়াদিয়া লঘুপদক্ষেপে দুল্‌কি-চালে চলিয়াছে। ফকির-সন্ন্যাসীরা চলিয়াছে—একেবারে নগ্নকায়;—আপাদমস্তক শাদা চূর্ণে আচ্ছন্ন। পাল্‌কী চলিয়াছে, তাঞ্জাম চলিয়াছে। সমস্তই যেন প্রাচ্য পরীদৃশ্যের একটি চিত্রপট—অপূর্ব্ব একরঙা গোলাপী ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ।

 কতকগুলা লোক রাজার পোষা চিতাদিগকে রজ্জুবদ্ধ করিয়া, জনতায় অভ্যস্ত করাইবার জন্য উহাদিগকে লইয়া বেড়াইতেছে। চিতারা সতর্কভাবে পা টিপিয়াটিপিয়া চলিয়াছে। উহাদিগকে দেখিতে অদ্ভুত। মাথায় ছোট-ছোট জরির টুপি; থুঁতির নীচে একটা পুষ্পাকার ফিতার গ্রন্থি। মখ্‌মলের মত পায়ের থাবাগুলা,—একটার পর একটা,—কি সন্তর্পণেই মাটির উপর রাখিয়া চলিতেছে! আরো বেশী নিরাপদ্‌ হইবার জন্য কতকগুলি লোক উহাদের আংটা-বদ্ধ পুচ্ছ ধরিয়া রহিয়াছে। ইহারা ছাড়া আরো চারিজন পরিচারক পিছনে-পিছনে চলিয়াছে।

 তা ছাড়া, সেই প্রাকারদ্বারের সম্মুখে যে-শ্রেণীর জীব দেখা গিয়াছিল, সেইরূপ কতকগুলি লোক এখানেও বিষণ্নমুখে ইতস্তত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। দেখিলে মনে হয়, যেন গোর হইতে পলাইয়া আসিয়াছে। উহারা সাহস করিয়া এই পুষ্পবর্ণরঞ্জিত সুন্দর পুরীতে প্রবেশ করিয়াছে এবং আপনাদের অস্থিগুলা টানিয়া-টানিয়া লইয়া বেড়াইতেছে!…প্রথমে দেখিয়া যেরূপ মনে হইয়াছিল, তাহা অপেক্ষা এই সব লোকের সংখ্যা আসলে অনেক বেশী। অন্তঃপ্রবিষ্ট নিষ্প্রভ নেত্রে যাহারা টলিয়া-টলিয়া ইতস্তত বেড়াইতেছে, শুধু ইহারাই যে দুর্ভিক্ষপীড়িত লোক, তাহা নহে; দোকানদারদের মধ্যে, সুশোভন সুসজ্জিত দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে, ছেঁড়া ন্যাক্‌ড়ার বস্তার মত—নরকঙ্কালের মত, এইরূপ আরো কতকগুলা লোক পাথর-বাঁধানো পদপথের উপর পড়িয়া