পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে
২৪৫

আছে। পথ-চল্‌তি লোকেরা—পাছে উহাদের মাড়াইয়া ফেলে, এই ভয়ে একটু পাশ কাটাইয়া চলিতেছে…এই প্রেতমূর্ত্তিগুলা চতুষ্পার্শ্বস্থ ক্ষেত্রভূমির কৃষক। যে অবধি বৃষ্টির অভাব হইয়াছে, তখন হইতেই উহারা, শস্যনাশনিবারণার্থ প্রাণপণে যুঝাবুঝি করিয়াছে; এই দীর্ঘকাল, উহারা যে দারুণ কষ্ট ভোগ করিয়াছে,—উহাদের দেহের অসম্ভব কৃশতা তাহারই ফল। এখন সব শেষ হইয়া গিয়াছে। গরুবাছুর সমস্তই মরিয়া গিয়াছে। মৃত গরুর চামড়াও উহারা জঘন্য মূল্যে বিক্রয় করিয়াছে। যে সকল জমিতে, উহারা চাষবুনানি করিয়াছিল, সমস্তই এখন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছে। সেখানে এখন আর কিছুই অঙ্কুরিত হয় না। একমুঠা অন্নের জন্য উহারা কাপড়চোপড়, রূপার গহনাপত্র,—উহাদের যাহা-কিছু ছিল, সমস্তই বিক্রয় করিয়াছে। কয়েকমাস ধরিয়া উহাদের শরীর ক্রমশই শীর্ণ হইতেছে। তাহার পর এখন এই দারুণ দুর্ভিক্ষ;—ক্ষুধার অসহ্য যন্ত্রণা। ক্রমে শবদেহের পূতিগন্ধে সমস্ত গ্রামপল্লী আচ্ছন্ন হইয়া গেল।

 অন্ন! হাঁ, এই সব লোক একমুঠা অন্নের জন্য লালায়িত; তাই উহারা এই নগরাভিমুখে আসিয়াছে। এইখানে আসিলে লোকে উহাদের প্রতি দয়া করিবে, উহাদের প্রাণ বাঁচাইবে—এইরূপ উহাদের বিশ্বাস ছিল। কেন না, উহারা পরস্পরায় শুনিয়াছিল,—নগর-অবরোধের সময় খাদ্যসামগ্রী যেরূপ নগরের মধ্যে সংগ্রহ করিয়া রাখা হয়, সেইরূপ এইখানে রাশিরাশি চাউল-ময়দা রক্ষিত হইয়াছে; এবং এই নগরে আসিলেই সকলে একমুঠা খাইতে পায়।

 বস্তুত রাজার আদেশক্রমে সারিবন্দি উষ্ট্রপৃষ্ঠে বস্তা বস্তা চাউল ও ছোলা দূরপ্রদেশ হইতে সহরে অষ্টপ্রহর আমদানি হইতেছে। ধান্যাগারে—এমন কি, পদপথের উপরেও উহা জমা করিয়া রাখা হইতেছে;—শুধু এই ভয়ে, পাছে চতুর্দ্দিকের দুর্ভিক্ষ এই সুন্দর গোলাপী নগরেও প্রবেশ