পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

চাহিয়া দেখিলে তখনি হাত বাড়াইয়া দিতেছে,—পেট চাপ্‌ড়াইতেছে। যাহারা ভিক্ষা চাহিয়া-চাহিয়া একেবারে হতাশ হইয়াছে, তাহারা জনতার মধ্যে—অশ্বগণের মধ্যে, ভূতলে শুইয়া পড়িয়াছে। প্রাসাদমন্দিরাদির দুইটি বীথি যেখানে মিলিত হইয়াছে, সেইখানকার একটি চত্বর-ভূমিতে,—যেখানে দোকানদার, ঘোড়সওয়ার, মল্‌মল্‌বস্ত্রাবৃত অলঙ্কারভূষিত রমণী প্রভৃতির বহুল জনতা,—সেইখানে একজন বিদেশী, একজন ফরাসী,—শীর্ণকায় বীভৎসদর্শন চলৎশক্তিরহিত একগাদা ভিক্ষুকের নিকট আসিয়া তাহার গাড়ি থামাইল এবং নতকায় হইয়া তাহাদের স্পন্দহীন নিশ্চেষ্ট হস্তে কতকগুলা মুদ্রা অর্পণ করিল। তখন হঠাৎ একদল “মমি”-শব যেন পুনর্জ্জীবিত হইয়া উঠিল; মলিন চীরবস্ত্রের মধ্য হইতে মাথা তুলিল; চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল। পরে সেই কঙ্কালমূর্ত্তিগুলা খাড়া হইয়া দাঁড়াইল। “ওরে! কে একজন আসিয়া ভিক্ষা দিচ্চে, পয়সা দিচ্চে; এইবার তবে খাদ্য-সামগ্রী কিন্‌তে পারা যাবে।” যে-সব ভিক্ষুকের গাদা,—আর-একটু দূরে—পথ-চল্‌তি লোকের পিছনে, কাপড়ের বস্তার পিছনে, অথবা মিঠাইওয়ালার উনানের পিছনে প্রচ্ছন্ন ছিল, ক্রমশ তাদের মধ্যেও এই পুনর্জাগৃতি সংক্রামিত হইল। সেই সব গাদা নড়িয়া উঠিল, উঠিয়া দাঁড়াইল, অগ্রসর হইতে লাগিল। যাহাদের চোপসানো ঠোঁটের মধ্য হইতে দাঁত বাহির হইয়া পড়িয়াছে, যাহাদের মাছি-লাগা চোখ কোটরে ঢুকিয়া গিয়াছে, কণ্ঠনালীর অস্থিবলয়ের উপর যাহাদের স্তনগুল খালী থলের মত ঝুলিয়া পড়িয়াছে,—সেই সব শ্মশান-প্রেতেরা সেই বিদেশী ফরাসীকে ঘিরিয়া দাঁড়াইল;—তাহার দিকে ঠেলিয়া আসিতে লাগিল; পক্ষান্তরে তাহাদের দীননেত্র যেন মার্জ্জনাভিক্ষা করিতে লাগিল, আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিল, কাকুতিমিনতি করিতে লাগিল।…

 তাহার পর নিস্তব্ধভাবে সকলে সরিয়া পড়িল,—কোথায় যেন মিলাইয়া গেল। ঐ প্রেতগণের মধ্যে একজনের পা দৌর্ব্বল্য-প্রযুক্ত টলিতেছিল;