পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৫৩

সে আর-একজনের কাঁধে ভর দিল;—এইরূপ পরস্পরের ঠেলা ও চাপে,—পুতুলনাচের পুতুলগুলার মত, একতাড়া পাকাটির মত, সবাই একসঙ্গে ভূতলে পড়িয়া গেল। কাহারও এতটুকু শক্তি নাই যে, সেই ঠেলা সাম্‌লাইয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া থাকে, উহারা মাটিতে পড়িয়া ধূলায় লুটাইতে লাগিল, মূর্চ্ছিত হইল, আর উঠিতে পারিল না।…

 এই সময়ে একটা বাদ্যের রোল ক্রমশ নিকটবর্ত্তী হইল। আবার জনতার গুঞ্জনধ্বনি শোনা গেল। কাল দেবালয়ে উৎসব হইবে—ইহাই ঘোষণা করিবার জন্য মন্দিরের কতকগুলি লোক রাস্তায় সমারোহে বাহির হইয়াছে। এই সময়ে, পথ করিবার জন্য, একজন রক্ষিপুরুষ ক্ষুধাক্লিষ্টা একটি বৃদ্ধাকে ধরিল। এই বৃদ্ধা ধূলিতে মুখ গুঁজিয়া, দুই হাত সটান্ ছড়াইয়া, পুলিস-নির্দ্দিষ্ট লাইন্ ছাড়াইয়া, যাত্রাপথের উপর পড়িয়া ছিল। রক্ষিপুরুষ সেই কম্পিতকায় বৃদ্ধাকে উঠাইয়া-লইয়া পদপথের উপর রাখিয়া দিল।

 এই সুন্দর সমারোহের ঠাট্‌ আবার চলিতে আরম্ভ করিল। প্রথমে একটা কালো হাতী যাত্রা শুরু করিল। ইহার শুণ্ড শেষপ্রান্ত পর্য্যন্ত স্বর্ণবর্ণে রঞ্জিত। শানাই ও কর্ত্তাল বাজাইতে বাজাইতে বাদকেরা সকলের পিছনে চলিয়াছে। শানাইয়ে একটা বিষাদগম্ভীর সুর আলাপ করিতেছিল।

 পরে, উচ্চ মুক্তার মুকুটে সুশোভিত হইয়া, দেবসজ্জায় সজ্জিত একদল বালককে পৃষ্ঠে লইয়া, চারিটা ধূসরবর্ণ হস্তী অগ্রসর হইল। গজারূঢ় সুসজ্জিত বালকেরা, রঙিন সুগন্ধি চূর্ণরাশি জনতার উপর নিক্ষেপ করিতে লাগিল। এই চূর্ণ এত পাতলা ও লঘু যে, উহা জলদজাল বলিয়া মনে হয়। প্রথমেই এই চুর্ণ নিজ্‌ হাতীদের উপর নিপতিত হইল। এই সব হাতীদের মধ্যে কেহ বা বেগ্‌নি, কেহ বা হল্‌দে, কেহ বা সবুজ, কেহ বা লাল—এইরূপ চিত্রিত রঙে রঞ্জিত হইল। এই মোহনমূর্ত্তি বালকেরা স্মিতহাস্যসহকারে মুঠা-মুঠা চূর্ণ জনতার মধ্যে নিক্ষেপ করিতে লাগিল;