পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৫৫

হাঁপাইতেছে; বাঘিনীর Jude-মণির মত ফিঁকা হরিদ্বর্ণ চক্ষুর প্রহেলিকাপূর্ণ দৃষ্টি তাহাদের উপর নিপতিত রহিয়াছে।

 দোকানদারেরা তাড়াতাড়ি তাহাদের বিচিত্ররঙের বস্ত্রাদি ভাঁজ করিয়া রাখিতেছে; তাহাদের ঝক্‌ঝকে তাম্রসামগ্রী—তাহাদের থালা, তাহাদের ঘটিবাটী ঝুড়ির মধ্যে উঠাইয়া রাখিতেছে। এই সমস্ত জিনিষপত্র উঠাইয়া তাহারা নিজ নিজ গৃহে চলিয়া গেল। এই সব নেত্ররঞ্জন দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে যে সকল কঙ্কালমূর্ত্তি, দল বাঁধিয়া ইতস্তত শুইয়া ছিল;—দ্রব্যসামগ্রী অপসারিত হইলে ক্রমে তাহারা একটু-একটু করিয়া নেত্রসমক্ষে প্রকাশ পাইতে লাগিল। এখানে ইহারাই এখন অবশিষ্ট;—এই পদপথের উপর এখন ইহাদেরই একাধিপত্য।

 ক্রমশ এই দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকেরা, দল ছাড়িয়া পৃথক্‌ হইয়া পড়িল। এখন চারিদিক জনশূন্য—এখন ইহাদিগকেই অধিক সংখ্যায় দেখা যাইতেছে। একটু পরেই দেখিতে পাইবে, তাহাদের মৃতশরীরে—তাহাদের মলিন চীরবস্ত্রে সমস্ত পদপথ পরিচিহ্নিত।

 নগর প্রাচীরের বাহিরে, উদাস-উজাড় ক্ষেত্রভূমির মধ্যে, এই সন্ধ্যাকালে,—প্রাণিপুঞ্জে সমস্ত মরা-গাছগুলা আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে। চিল, শকুনি, বড়-বড় জাঁকালো ময়ূর, এক একপরিবারের মত দল বাঁধিয়া গাছের উপর বিশ্রাম করিতেছে। পত্রহীন লঘু শাখাপ্রশাখার মধ্যে যেসব স্থান শূন্য ছিল, এক্ষণে উহাদের দ্বারা পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। উহাদের দিবসের ডাক অনেকটা থামিয়া আসিয়াছে; অনেকক্ষণ পরে-পরে একএকবার ডাকিয়া উঠিতেছে। একটু পরে একেবারেই নীরব হইবে। ময়ূরদের প্যান্‌পেনে ছিঁছ্‌কাঁদুনি ডাক সন্ধ্যার প্রাক্কাল পর্য্যন্ত চলিতে থাকে, তাহার পরেই শৃগালেরা শোকোচ্ছ্বসিত কণ্ঠস্বরে উহার “উতর” গাইতে আরম্ভ করে।

 রাত্রি দশটা। এ নগরের পক্ষে অনেক রাত্রি; কেন না, এখানে