পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৫৭

প্রত্যেক কুলুঙ্গির মধ্যে একএকটি বিগ্রহ—গজমুণ্ডধারী ঘোরদর্শন গণেশ, কিংবা মৃত্যুর দেবতা শিব অধিষ্ঠিত। সকলেরই গলায় মালা এবং সকলেরই নিকটে একএকটা প্রদীপ জ্বলিতেছে;—এই প্রদীপ সমস্ত রাত্রি জ্বলিবে।

 এই সব ময়লা ছেঁড়া ন্যাক্‌ড়ার গাদা—যাহার কোন-একটা বিশেষ রূপ নাই, নাম নাই, যাহা অনির্দ্দেশ্য—ইহাই এই সুরম্য গোলাপী নগরের একমাত্র কলঙ্ককালিমা। মধ্যে-মধ্যে এই ন্যাক্‌ড়ার গাদা হইতে, কখন বা কাশির শব্দ, কখন বা গোঙানি-শব্দ, কখন বা নাভিশ্বাসের শব্দ শুনা যায়; আবার কখন-কখন দেখা যায়,—সেই ন্যাক্‌ড়ার গাদা হইতে কেহ বা বাহুরূপ অস্থিখণ্ড বাহির করিয়া নাড়িতেছে; কেহ বা সেই ন্যাক্‌ড়াগুলা জ্বরবিকারগ্রস্ত রোগীর ন্যায় উন্মত্তভাবে ঝাঁকাইতেছে;—গাঁট-বাহির-করা অস্থিসার পাগুলা ছুঁড়িতেছে। যাহারা এইরূপ মাটির উপর মুক্তাকাশতলে পড়িয়া আছে, তাহাদের পক্ষে, কি জ্বালাময় দিবস, কি প্রশান্ত রাত্রি, কি প্রভাময় প্রভাত—সকলি সমান। তাহাদের কোন আশাভরসা নাই। তাহাদের প্রতি কাহারও মায়া-মমতা নাই। তাহাদের ভারক্লান্ত মস্তক যেখানে একবার ঢলিয়া পড়িয়াছে, সেইখানেই পড়িয়া থাকিবে; সেই পদপথের সানের উপরই উহাদিগকে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় থাকিতে হইবে; এবং সেই মৃত্যুতেই উহাদের সকল যন্ত্রণার অবসান হইবে।


রাজাদিগের চাঁদ্‌নী-দরবারের ছাদ।

 যে ভগ্নাবশেষরাশি আমার পদপ্রান্ত পর্য্যন্ত ক্রমশ নামিয়া আসিয়াছে, তাহার উপর সান্ধ্যগগনবিলম্বিত পাণ্ডুবর্ণ পূর্ণচন্দ্র স্বকীয় ম্লানজ্যোতি এখনো বিস্তার করিতে আরম্ভ করে নাই। একঘণ্টাকাল হইল, যদিও সূর্য্যদেব চতুর্দিক্‌স্থ শৈলমালার পশ্চাতে অস্তমিত হইয়াছেন, তথাপি এখনো তাঁহার পীতাভ আলোকে দিগন্ত আলোকিত। আমি আজ একাকী, বিভবমহিমান্বিত ও বন্যভীষণ কোন এক স্থানে,—একটা পুরাতন রাজপ্রাসাদের ছাদের উপর