পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 আমি যা ভাবিয়াছিলাম, তাই। আজ দেখিলাম, এই শ্মশানভূমে অনেকগুলি বৃদ্ধা পড়িয়া রহিয়াছে—যেন কতকগুলো অস্থি ও ন্যাক্‌ড়ার বস্তা। ইহারা কোন মাতামহী কিংবা পিতামহী—যাহাদের বংশধরেরা নিশ্চয়ই মরিয়াছে; এবং এইবার নিজেদের মরিবার পালা, এইরূপ মনে করিয়া ইহারাও অদৃষ্টের হস্তে আত্মসমর্পণ করিয়া মৃত্যুর প্রতীক্ষায় শান্তভাবে শুইয়া আছে। ইহারা কিছুই চাহে না; একটুও নড়ে-চড়ে না; কেবল ইহাদের বড় বড় উন্মীলিত নেত্রে দারুণ বিষাদ-নৈরাশ্য পরিব্যক্ত হইতেছে। উপরে, মরাগাছের ডালে বসিয়া কাকেরা ইহাদিগকে নজরে-নজরে রাখিতেছে;—আসল সময়ের প্রতীক্ষা করিতেছে।

 আজ কিন্তু অন্যদিন অপেক্ষাও অধিক-সংখ্যক শিশু দেখিলাম। আহা! এই ক্ষুদ্র শিশুগুলি,—কেন তাহারা এত কষ্ট পাইতেছে, কেন সকলে তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়াছে, এইরূপ ভাবিয়াই যেন বিস্মিত; এবং বিচারপ্রার্থনার ভাবে আমার দিকে যেন দীনভাবে চাহিয়া আছে!…এই ছোট ঘোট দুর্ব্বল মাথাগুলির ভার—তাহাদের শীর্ণ কঙ্কালশরীর যেন আর বহন করিতে পারিতেছে না; একএকবার আস্তে আস্তে মাথা তুলিতেছে, আবার বিশ্বস্তভাবে চক্ষু নিমীলিত করিয়া আমার হাতের উপর ঢলিয়া পড়িতেছে,—যেন আমার আশ্রয়ে নিশ্চিন্তমনে একটু ঘুমাইতে চাহে। কখন-কখন দেখা যায়, সাহায্যের কাল উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু অনেক-সময়ে ইহাও দেখিতে পাই,—হাতে পয়সা দিবামাত্র উহারা উঠিয়া দাঁড়াইতেছে এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী কিনিবার জন্য কষ্টেস্রষ্টে চাউলের দোকানে যাইতেছে।

 আশ্চর্য্য! কি সামান্য ব্যয়েই এই শিশুগুলির প্রাণরক্ষা করা যায়![১]

 এই গোলাপীরঙের সিংহদ্বারগুলি পার হইবার পরেই, সম্মুখে তিনক্রোশ-

  1. একজন ভারতবাসীর মিতভোজনের দৈনিক ব্যয় প্রায় দুই-আনা মাত্র!