পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

আরোহণ করিলাম। বেলে-পাথর ও মার্ব্বেলে গঠিত এই প্রাসাদটি শৈলরাশির উপর রাজসিংহাসনের মত সদর্পে বিরাজ করিতেছে; এবং সেখানে অধিষ্টিত হইয়া চতুর্দ্দিক্‌স্থ ধ্বংশাবশেষগুলি অবলোকন করিতেছে।

 প্রবেশ করিয়া,—উপরে উঠিতে উঠিতে, যে-ই একটা মোড় ফিরিলাম, অমনি কৃষ্ণবর্ণ ঘোরদর্শন একটি মন্দির দৃষ্টিপথে পতিত হইল;—যাহার ভূমি শোণিতধারায় কলঙ্কিত, এবং যেখান হইতে মৃতপশুর পূতিগন্ধ সর্ব্বদা নিঃসৃত হইতেছে। ইহা পুরাতন পশুবলির স্থান। মন্দিরের গর্ভদেশে, একটা কুলুঙ্গির মধ্যে, প্রচণ্ডভীষণ দুর্গা অধিষ্ঠিত; মূর্ত্তিটা অতীব ক্ষুদ্র ও অস্ফুটাবয়ব;—একটা ক্রুরকর্ম্মা রাক্ষসী, লাল ন্যাক্‌ড়ায় জড়ানো। ধ্বজস্তম্ভের ন্যায় একটা প্রকাণ্ড ঢাক তাহার পদতলে স্থাপিত। ঐখানে, বহুশতাব্দী হইতে, প্রতিদিন প্রাতে, ছাগবলি হইয়া আসিতেছে; সেই ছাগের তপ্তশোণিত একটা পিতলের গামলায় ও তাহার সশৃঙ্গ মুণ্ডটা একটা থালায় রক্ষিত হইয়া থাকে। আশ্চর্য্য! সংহারদেবতার পত্নী দুর্গারূপে এই ভীষণ কালী কিরূপে হিন্দুদেবতাদিগের মধ্যে স্থান পাইল? যে দেশে জীবহিংসা নিষিদ্ধ, সেই দেশে, কিছুদিন পূর্ব্বে এই স্থানে, রক্তপিপাসু কালীর সম্মুখে কিনা নরবলি হইত! না জানি, কোন্ পুরাকালের গর্ভ হইতে—কোন্ অমানিশার মধ্য হইতে এই কালীমূর্ত্তি নিঃসৃত হইয়াছে!…

 আমরা পথের প্রত্যেক আড্ডায় যেখানেই থামিতেছি, সেই খানেই আমাদের সম্মুখে “গজাল-মারা” পিতলের দ্বারসমূহ উদ্ঘাটিত হইতেছে। তাহার পর অশ্বপৃষ্ঠ হইতে নামিয়া পদব্রজে,—প্রাঙ্গণের মধ্য দিয়া, বাগানের মধ্য দিয়া, সিঁড়ি দিয়া—বরাবর উপরে উঠিতে লাগিলাম।

 মোটা-মোটা থামওয়ালা মার্ব্বেলের দালান; তাহাতে কত সূক্ষ্ম বিচিত্র কারুকার্য্য; উহার খিলানমণ্ডপ পূর্ব্বে ছোট ছোট কাচের টুকরা ও আয়নার টুকরায় আচ্ছাদিত ছিল; গুহাগাত্রের ন্যায় এখন সমস্ত “ছাতাপড়া” হইলেও, স্থানে-স্থানে এখনো ঝক্‌মক্‌ করিতেছে। দরজাগুলা