পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

পূজা-অর্চ্চনারও এই সময়। লোহিতবসনা রাক্ষসীদেবীর ঢাক তাহারই “গৌরচন্দ্রিমা” আরম্ভ করিয়াছে।

 প্রথম-সঙ্কেতের মত ঢাকের উপর দুই চারিবার সজোরে ঘা পড়িল; তাহার পরেই ভীষণ শব্দঘটা; পরক্ষণেই, আর্ত্তনাদী শানাই ও কাংস্যকর্ত্তাল তাহার সহিত যোগ দিল। আর একটা শঙ্খ স্বরগ্রামের দুটিমাত্র স্বর অবলম্বন করিয়া ঘোররবে অবিশ্রামে বাজিতে লাগিল।

 এই শব্দ যেন ভূগর্ভ হইতে আমার নিকট আসিয়া পৌঁছিতেছে; ক্রমেই স্ফীত হইয়া উঠিতেছে; এবং উপর্যুপরি-বিন্যস্ত অসংখ্য শূন্যগর্ভ ও শব্দযোনি দালানের মধ্য দিয়া, এই উচ্চ ছাদ পর্য্যন্ত পৌঁছিতে পৌঁছিতেই অনেকটা রূপান্তরিত হইতেছে। সহসা, উচ্চ আকাশ হইতে, প্রত্যুত্তরচ্ছলে কাঁশরঘণ্টার ধ্বনি নিঃসৃত হইল।

 এই ধ্বনি, একটি ক্ষুদ্র শিবমন্দির হইতে যেন পূর্ণপক্ষভরে এই দিকে উড়িয়া আসিতেছে। আমার চতুর্দ্দিকে যে সকল উদগ্র শৈলচূড়া রহিয়াছে, তাহারি একটার উপরে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত।

 যাহার দন্তুর চূড়াবলী কালো চিরুণীর দাঁতের মত পীতাভ ম্লান অম্বরে পরিস্ফুটরূরে অঙ্কিত—সেই গগনচুম্বী প্রাকারের গায়ে এই মন্দিরটি ঠেস্‌ দিয়া রহিয়াছে।

 এই সকল ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এতটা শব্দকোলাহল আমি প্রত্যাশা করি নাই। কিন্তু ভারতবর্ষে, নগরাদি যতই জনপরিত্যক্ত হউক না,—মন্দিরাদি যতই ভগ্নদশাপন্ন হউক না, পূজা-অনুষ্ঠানের কোথাও গতিরোধ হয় না; দেবসেবা বরাবরই সমান চলিতে থাকে।

 কয়েক মিনিট ধরিয়া, কাঁশর-ঘণ্টা মুখরিত সেই ক্ষুদ্র মন্দিরটির দিকে আমি মাথা তুলিয়াছিলাম; তাহার পর যে-ই ভূতলের দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম, অম্‌নি আমার নিজের ছায়া দেখিয়াই চমকিত হইলাম,—ছায়াটি বেশ পরিস্ফুট ও সহসা-অঙ্কিত। সহজবুদ্ধিতে প্রথমে আমার এইরূপ