পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
২৩

 আমি এখানে একাকীই বিচরণ করিতেছি। জ্যোস্নালোকে যে ছায়া দেখিয়া এখানকার লোকেরা ভয় পায়, আমি সেই মন্দির-চূড়ার প্রকাণ্ড ছায়ার অভিমুখে একাকীই অগ্রসর হইতেছি। পুরোহিত ও রাজাদিগের অপছায়ার ভয়ে, আমার পথ-নেতা আমার সঙ্গে আসে নাই। যখন আমি এখানকার একটি মন্দিরে আসিয়া পৌঁছিলাম, তখন উহার প্রকাণ্ড দাগোবার নিকট যাইবার উদ্দেশে, যে পার্শ্বে জ্যোৎস্না পড়িয়াছে, আমার স্বাভাবিক প্রবৃত্তির উচ্ছাসে, আমি সেই অংশটিই আপনা হইতেই বাছিয়া লইলাম।

 এই পরিসর-স্থানটুকু প্রেতাত্মার বিচরণভূমি বলিয়াই যেন বোধ হয়। চারি দিকেই সারি সারি স্তম্ভ। এইখানে বিচরণ করিতে করিতে হঠাৎ একটা পাথরের টালির উপর পা পড়ায়, সেই শব্দে চারি দিক প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। তখন দেখিলাম, ভগ্নাবয়ব দেবদেবীর মূর্তির মধ্যে, বেদিকা প্রভৃতির ভগ্নাবশেষের মধ্যে আমি আসিয়া পড়িয়াছি;—সমস্তই নীল আলোকে প্লাবিত।

 নিস্তব্ধ অনুরাধপুরের মধ্যে, এখানকার নিস্তব্ধতায় কি যেন একটু বিশেষত্ব আছে; এখানকার লোকদিগের ন্যায় ভয়গ্রস্ত হইয়া আমি থমকিয়া দাড়াইলাম; দাগোবার চারি দিকে ঘুরিয়া বেড়াইতে সেই ভীতিজনক ছায়াময় প্রদেশে প্রবেশ করিতে আমার আর সাহস হইল না।

 যাহা হউক, যে সকল রাজা—যে সকল পুরোহিত এই মন্দির নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাঁহারা এখন কোথায়?—কোন্ নির্ব্বাণের মধ্যে, কোন্ ধূলিরাশির মধ্যে তাহারা এখন অবস্থিত? তবে সেই দূর দেশ হইতে তাহাদের অপচ্ছায়া এখানে আসিবে কি করিয়া?

 তা ছাড়া আমার মনে হইতেছে, যে ধর্ম্মে তাহারা বিশ্বাস করিতেন, সেই বৌদ্ধ ধর্ম্ম- এখন মৃত,—এখানকার ভগ্নাবশেষের মধ্যে—পুত্তলিকা- দিগের পুরাতন ভস্মের মধ্যে উহা বিলীন হইয়া গিয়াছে।