পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ধ্বংসাবশেষে সমাচ্ছন্ন। সেইখান হইতে শৃগালের শোকবিষন্ন তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর আবার শুনা যাইতে লাগিল।

 আবার যখন আমি নীচে নাবিতে লাগিলাম, তখন সিঁড়ির মধ্যে—প্রাসাদের নিম্নস্থ দালানগুলার মধ্যে, তেমন অন্ধকার আর নাই। সে সমস্তই চন্দ্রমার শুভ্রকিরণে—নীলাভ কিরণে—অনুবিদ্ধ হইয়াছে; দন্তাকৃতি ছোট ছোট জান্‌লার ফাঁক দিয়া রজতকিরণ প্রবেশ করিয়া, গবাক্ষের সুন্দর গঠনরেখা হর্ম্ম্যতলের সানের উপর অঙ্কিত করিয়াছি; অথবা, প্রাচীরের প্রস্তরফলকের উপর বিলুপ্ত খচিত-কাজগুণিকে (mosaic) আবার যেন ফুটাইয়া তুলিয়াছে; মনে হয়, যেন সমস্ত দেওয়ালের গায়ে রত্নবাজি কাথবা সলিলবিন্দু বিকীর্ণ। যখন আমি কুসুমসৌরভাভিসিক্ত উদ্যানের মধ্য দিয়া চলিতে লাগিলাম, নারাঙ্গিনেবুব উচ্চতম শাখাগুলির হেলন-দোলনে ও মর্ম্মরশব্দে কপিবৃন্দ চকিত চঞ্চল হইয়া উঠিল।

 নীচে, প্রথম-দ্বারগুলির সম্মুখে,—যেখানে ছাদের স্বল্প শৈত্যের পরেই বায়ু যেন আবার হঠাৎ গরম হইয়া উঠিয়াছে - সেইখানে বল্লমহস্তে অশ্বপৃষ্ঠের উপর আমার পথ প্রদর্শকেরা আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। এই নৈশশান্তির মধ্যে ঘোড় সওয়ার হইয়া শান্তভাবে আবার আমরা জয়পুর অভিমুখে ফিরিলাম। কাল প্রভাতে নিশ্চিতই জয়পুর হইতে প্রস্থান করিব মনে করিয়াছি।

 এখান হইতে দেড়শতক্রোশ দূরে, বিকানায়াবে যাইব মনে করিয়াছিলাম; কিন্তু সে সঙ্কল্প ত্যাগ করিয়াছি। শুনিলাম, সেখানে দুর্ভিক্ষের ভীষণতা চূড়ান্তসীমায় উঠিয়াছে; রাস্তাঘাট সমস্তই মৃতদেহে আচ্ছন্ন। না, এ ভীষণ দৃশ্য আমার যথেষ্ট দেখা হইয়াছে; আর দেখিতে ইচ্ছা নাই। এখন আমি সেই সব প্রদেশের অভিমুখে যাত্রা করিব, যেখানে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ততটা নাই; অথবা বঙ্গোপসাগরের সমীপবর্ত্তী সেই সব প্রদেশে যাইব, যেখানে এখনো লোকের প্রাণরক্ষা হইতেছে।