পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৬৭

জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।

 এই দুর্ভিক্ষপ্রদেশ ছাড়িয়া বঙ্গোপসাগরতটে ফিরিয়া যাইবার সময় গোয়ালিয়ার আমার পথে পড়িল। দুর্ভিক্ষপ্রদেশে ইহাই আমার শেষ থামিবার আড্ডা। সমস্ত নগরটি খোদিত-কারুকার্য্যে, শুভ্র ‘জালির’ কারুকার্য্যে সমাচ্ছন্ন। সমস্ত ভারতবর্ষের মধ্যে গোয়ালিয়ার প্রস্তরের উপর সুন্দর ও বিচিত্র তক্ষণকার্য্যের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে যাহা কিছু দেখা যায়, প্রায় সবই সুন্দর; সবই খোদাইকাজে—জাফ্‌রির কাজে বিভূষিত।

 এই শোভাগৃহগুলি দেখিলে মনে হয়, যেন পাৎলা তাস-কাগজের উপর ফোঁড় কাটা; কিন্তু আসলে কঠিন বেলে-পাথরে নির্ম্মিত এবং উহার সূক্ষ্ম সুকুমার কাজগুলি আদৌ ক্ষণভঙ্গুর নহে। দ্বারপ্রকোষ্ঠের উপর পুষ্পমালার নক্‌সা; গবাক্ষের উপর ঝালরের নক্‌সা। দ্বারপ্রকোষ্ঠলগুলা ছোট-ছোট অসংখ্য থাম দিয়া ঘেরা; থামের মাথালগুলা বৃক্ষপত্রের অনুকরণে এবং থামের তলদেশ পুষ্পকোষের অনুকরণে গঠিত। উপর্য্যুপরিন্যস্ত রাশিরাশি অলিন্দ ও বারণ্ডা,—স্বসীমা অতিক্রম করিয়া রাস্তার উপর বাহির হইয়া পড়িয়াছে। সমস্তই বেলে-পাথরের। এই গোয়ালিয়ার-নগরে, যদি কেহ গবাক্ষের গরাদে, কিংবা সুন্দরীদিগকে প্রচ্ছন্ন রাখিবার জন্য ঝাঁজরী-জান্‌লা নির্ম্মাণ করিতে চাহে, তাহা হইলে সে বেলে-পাথরের একটা বৃহৎ চাক্‌লা লইয়া তক্তার মত চাঁচিয়া পাৎলা করে এবং তাহাতে ছিদ্র করিয়া লতাপাতার আকারে অনেকগুলা সূক্ষ্মচারু ফুকর বাহির করে। দেখিলে মনে হয়, যেন উহা হাল্‌কা কাঠের কাজ কিংবা কাগজের কাজ। সমস্তই চুনকামের মত তুষারশুভ্র শ্বেতবর্ণে ধবলিত; মধ্যে-মধ্যে, দেয়ালের উপর পুষ্প, হস্তী ও দেবদেবীর চিত্র উজ্জ্বলবর্ণে অঙ্কিত। এদিকে গ্রামপল্লী ক্রমেই উজাড় হইয়া পড়িতেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, এই ইন্দ্রপুরীতুল্য নগরটিতে