পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৭১

পথ-চল্‌তি লোকদিগের সম্মুখেই এই সব কাজ চলিতেছে;—তাহারা দেখিবার জন্য সেইখানে দাঁড়াইতেছে এবং আপনাদের মতামতও প্রকাশ করিতেছে। একটা কাপড়ের রং-করা শেষ হইবামাত্র অম্‌নি উহা গৃহবারণ্ডার উপর বিছাইয়া রাখা হইতেছে; অথবা দুইজন বালক রৌদ্রে শুকাইবার জন্য ঐ কাপড়টার দুই প্রান্ত ধরিয়া ক্রমাগত নাড়া দিতেছে। এই রঞ্জকদিগের অঞ্চলটিতে যেন একটা উৎসব অবিরাম চলিয়াছে। পাৎলা কাপড়গুলা গৃহাদির উপর ঝুলিতেছে; বালকেরা কোন কোন কাপড়ের দুই প্রান্ত ধরিয়া দুলাইতেছে; ঠিক্‌ যেন চারিদিকে উৎসবের নিশান উড়িতেছে।

 কখন কখন দেখা যায়, বরযাত্রীর দল ধীরে-ধীরে অগ্রসর হইতেছে; আগে-আগে ঢাক-ঢোল-শানাই চলিয়াছে; অশ্বপৃষ্ঠে বর; ভৃত্যগণ একটা বৃহৎ ছত্র তাহার মাথার উপর ধরিয়া আছে। আবার কখন-কখন দেখা যায়, শবযাত্রীর দল ছুটিয়া চলিয়াছে; শবশরীর দৃঢ়বন্ধনে বদ্ধ;—কাপড় দিয়া জড়ানো; শববাহকেরা দ্রুতপদে চলায়, শবশরীর ঝাঁকাইতেছে; সহযাত্রীরা হাঁপাইতে হাঁপাইতে পিছনে চলিয়াছে এবং কুকুরেরা আকাশের দিকে মুখ তুলিয়া যেরূপ চীৎকার করে, সেইরূপ একএকবার চীৎকার করিয়া উঠিতেছে। রাস্তার কোণে-কোণে ফকীর-সন্ন্যাসীরা গায়ে ভস্ম মাখিয়া অপস্মার-রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ন্যায় ধূলায় পড়িয়া নানাপ্রকার অঙ্গবিক্ষেপ করিতেছে, এবং যেন মরণযন্ত্রণা উপস্থিত, এইভাবে কাতরস্বরে ভিক্ষা চাহিতেছে। বাজার-চত্বরের চারিধারে সূক্ষ্ম খোদাইকাজ বিভূষিত কত দেবমন্দির ও চতুষ্কমণ্ডপ। যাহাদের ওড়না ইন্দ্রধনুর সমস্ত বর্ণে রঞ্জিত—সেই সব রমণী গালিচার দোকানে, রেশমি-বস্ত্রের দোকানে, ফলের দোকানে, মেঠায়ের দোকানে, শস্যের দোকানে প্রবেশ করিতেছে। আমাদের দেশে বিক্রয়ের জন্য যাহা দোকানে সাজাইয়া রাখা হয়—সেই সব শবদেহের বীভৎস দৃশ্য,—পচা মাছ, অন্ত্র ও টুক্‌রা-