পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

তাহার গাত্রবিলম্বিত ঘণ্টিকা হইতে একঘেয়ে মৃদুমধুর ধ্বনি নিঃসৃত হইতেছে। মধ্যাহ্নসূর্য্য, হাতীর তলদেশে হাতীর চলন্ত ছায়াচ্ছবি অঙ্কিত এবং মাটির উপর তাহার দোদুল্যমান শুণ্ডটি কালোরঙে চিত্রিত করিয়াছে। আদবকায়দার দস্তুর অনুসারে দুইজন লোক আমাদের আগে-আগে চলিয়াছে এবং রূপালী-মাথাওয়ালা দুইটা লম্বা ছড়ি হস্তে ধারণ করিয়া তন্দ্রাগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায় অলসভাবে উপরে উঠিতেছে। উপরে উঠিতে উঠিতে একএকটা দ্বার আমাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িতেছে; আমরা প্রাচ্যদেশসুলভ ঢিমা-চালে তাহার মধ্য দিয়া চলিয়াছি। দ্বারগুলা— বলা বাহুল্য—ভীষণ-দর্শন; তাহার উপরে প্রহরীদের ঘর; গোয়ালিয়ারের সৈনিকেরা পাহারা দিতেছে; কেন না, অতীত-গৌরবের নিদর্শনস্বরূপ বিপুল ভগ্নাবশেষের মধ্যে, পর্ব্বতের ঐ উচ্চচূড়ায়, তাহাদের রাজা এখন অবস্থিতি করিতেছেন। আমাদের চতুর্দ্দিকে, দূর দিগন্তের অস্পষ্ট পরিধি- মণ্ডল ক্রমশ বিস্তৃত হইতেছে। গগনবিলম্বিত একপ্রকার ভস্ম-কুয়াসার নীচে শুষ্ক তরুগণের বিচিত্রবর্ণ যেন ধূসরে বিলীন হইয়াছে।

 স্ফুলিঙ্গবৎ দীপ্যমান ধূলিকণায় পরিষিক্ত ধূসর দিগন্তদেশ ধূসর আকাশে মিলাইয়া গিয়াছে। সেই আকাশতলে বড়-বড় শিকারি-পাখী প্রাতঃকাল হইতে আবর্ত্তের ন্যায় ক্রমাগত ঘোরপাক দিয়া এক্ষণে শ্রান্ত- ক্লান্ত-অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে।

 শৈলরাশির মধ্য হইতে যেন একটা তপ্ত-নিশ্বাস উচ্ছ্বসিত হইল; আকাশে বায়ুর হিল্লোলমাত্র নাই। মধ্যাহ্নসূর্য্যের প্রচণ্ড কিরণে অভিভূত হইয়া পাখীরাও নিষ্পন্দ ও নিদ্রামগ্ন; চিল ও শকুনিরা পাখা গুটাইয়া স্থিরভাবে বসিয়া আছে এবং আমাদিগকে নিরীক্ষণ করিতেছে। গণ্ডোলা-নৌকার অবিশ্রান্ত দোলনের ন্যায় হাতীর চলন-ভঙ্গীতে আমাদের মন ক্রমশ অসাড় হইয়া পড়িতেছে; সূর্য্যের দুর্নিরীক্ষ্য আলোকে প্রতিহত হইয়া চক্ষু নিমীলিত হইতেছে; তাহার পরেই, এই সব ধূসর পদার্থরাশির