পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৭৯

মধ্যে,—বর্ষণহীন বহুবর্ষের ধূলায় লোহিতীকৃত এই সব প্রস্তররাশির মধ্যে,—সম্মুখের ভূমি ছাড়া, কাছের জিনিষ ছাড়া আমি আর কিছুই দেখিতে পাইতেছি না। প্রথমে চোখে পড়িল একটা জরির পাগ্ড়ি‌, একটা শ্যামল-রঙের ঘাড়, শাদা কাপড়ে আচ্ছাদিত একটা স্কন্ধ, একটা ছোট তীক্ষ্ণ বল্লম; হিন্দু মাহুত হাতীর স্কন্ধের উপর বুদ্ধের ন্যায় উপবিষ্ট; তাহার হাতে অঙ্কুশ। তাহার পর, হাতীর মাথায় জড়ান এক-টুকরা লাল কাপড়, কালো-ডোরা-কাটা গোলাপী-রঙের বৃহৎ কর্ণযুগল; মাছি ও ডাঁশ তাড়াইবার জন্য হাতী তাহার কানদুটা হাতপাখার মত ক্রমাগত নাড়িতেছে।

 গুরুপদভরে পথ দলিত করিয়া, শান্ত-শিষ্ট বশ্য অক্লান্ত হস্তী পর্ব্বতের উপরে উঠিতেছে। তাহার পার্শ্বদেশে একটা গোলাকার গণ্ডশৈল, দেখিতে তাহারি মত; না জানি, তিমিরাবৃত কোন্ দূর অতীতের মনুষ্যগণকর্ত্তৃক কতকটা হস্তিদেহের অনুকরণে এই গণ্ডশৈলটি খোদিত হইয়াছিল; উহাতে হস্তীর শুণ্ড, দীর্ঘদন্ত-সমন্বিত মস্তক, হস্তীর পশ্চাদ্ভাগ অস্পষ্টরূপে উৎকীর্ণ রহিয়াছে। তা ছাড়া, বিলুপ্তভাষায় লিখিত কতকগুলা উৎকীর্ণ- লিপি এবং পর্ব্বতের গায়ে খোদিত কুলুঙ্গির মধ্যে বহুসংখ্যক খোদিত দেব- দেবীর প্রতিমাও রহিয়াছে। যাহারা এই ভীষণ স্থানের প্রথম অধিবাসী, সেই পাল-রাজাদিগের ও জৈনদিগেরই এই সমস্ত কীর্ত্তি।

 নীচে,—জ্বলন্ত উত্তাপময় প্রসারিত ক্ষেত্রের মধ্যে ভাসমান একপ্রকার ভস্মময় বাষ্পের তলদেশে, প্রাচীন গোয়ালিয়ারের ভগ্নাবশেষসমূহ একটু-একটু দেখা দিতে আরম্ভ করিয়াছে; তা ছাড়া, নূতন গোয়ালিয়ার—সব শাদা—যাহাকে দেশীয় লোকেরা অবজ্ঞাসহকারে “লখ্‌খর” (সৈন্য-ছাউনী) বলে—তাহারও পাথরের বড়-বড় সৌধচূড়া, ও মন্দিরচূড়াদি অল্প-অল্প দৃষ্টিগোচর হইতেছে। এখন মধ্যাহ্ন। আমাদের মাথার উপর প্রচণ্ড মার্ত্তণ্ড অনলকণা বর্ষণ করিতেছেন; পাথরগুলা এরূপ তাতিয়া উঠিয়াছে,