পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
২৮৩

বিলম্বিত ঘণ্টিকা হইতে মধুর নিক্কণ নিঃসৃত হইতে লাগিল; আবার সেইরূপ পর্ব্বতের অপর পার্শ্বের ঢালু দিয়া আমরা শান্তভাবে নামিতে লাগিলাম এবং ক্রমশ একটা লালপাথরের গুহার মধ্যে প্রবেশ করিলাম;—হঠাৎ আমাদের মাথার উপর একটা ছায়া আসিয়া পড়িল। কতকগুলা ঘোড়সোয়ার আমাদের সম্মুখ দিয়া যাইতেছিল; হাতী দেখিয়া তাহাদের ঘোড়া ভড়্‌কাইয়া লাফালাফি করিতে লাগিল; একটা উট হঠাৎ মাথাঝাঁকানি দেওয়ায় উটের সোয়ার উষ্ট্রপৃষ্ঠ হইতে ভূতলে পতিত হইল। এই হাতীর দেশে এমন কোন জীবজন্তু নাই যে, হাতীর পাশ দিয়া গেলে ভয় না পায়।

 যে গুহাপথ দিয়া আমরা নামিতেছি, এই পথটি বড়-বড় প্রস্তরপ্রতিমায় সমাচ্ছন্ন। এই গুহাটি তীর্থঙ্কারদিগের প্রকাণ্ড প্রতিমাসমূহের নিবাসভূমি;—এই সমস্ত মূর্ত্তি পর্ব্বতগাত্র হইতে খুদিয়া বাহির করা হইয়াছে; কুলুঙ্গির মধ্যে, গুহার মধ্যে, কোন মূর্ত্তি উপবিষ্ট, কোনটি বা দণ্ডায়মান। বিশ-ফিট্‌ উচ্চ, সম্পূর্ণরূপে নগ্ন; সে নগ্নতায় কোন খুঁটিনাটিই বাদ যায় নাই—এমন কি, অশ্লীলতার মাত্রায় উপনীত হইয়াছে। উপত্যকার এক পার্শ্ব হইতে অপর পার্শ্ব পর্য্যন্ত এই সকল মূর্ত্তি অধিষ্ঠিত;—আমরা তাহার মধ্য দিয়া চলিয়াছি।

 ঘোড়শ শতাব্দীতে, প্রতিমাধ্বংসী মোগলসৈন্য এই পথ দিয়া—এই সকল মূর্ত্তির মধ্য দিয়া যাত্রা করিবার সময়, কাহারও মস্তক, কাহারও পুরুষাঙ্গ, কাহারও হস্ত ভাঙ্গিয়া ফেলে। এইরূপে সকল মূর্ত্তিগুলিই ছিন্নাঙ্গ হইয়া রহিয়াছে।